জিএম কাদেরের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে নেতাকর্মীদের গণ পদত্যাগ

0

ষ্টাফ রিপোর্টার/- জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। ঢাকা উত্তরের ৯টি থানার ৯৬৮ নেতা পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নয়, এরশাদের জাতীয় পার্টি ভবিষ্যতে আরও সুসংগঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগী নেতাকর্মীদের পক্ষে ড.

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির অবস্থা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে থাকা জাতীয় পার্টির জিএম এক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন, জাতীয় পার্টি তাকে একাই নির্বাচন করবে। এভাবেই তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এসেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সরব কথা বলে নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টাও করেছেন তিনি। আমরাও তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠি। কিন্তু নির্বাচনের আগে আমরা বুঝতে পেরেছি, তিনি গোপনে সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছেন। শেষ পর্যন্ত ৩০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়নের পর মাত্র ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড়ের বিনিময়ে পুরো দল বিক্রি করে দেন দলের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম পরাজয় বরণ করে জাতীয় পার্টি। আর নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ মাত্র ১১ জন প্রার্থী এমপি হয়েছেন। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, দলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। দলের এই দুর্দশার মধ্যেও চেয়ারম্যান একের পর এক দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার জঘন্য নজির সৃষ্টি করে চলেছেন। পল্লীবন্ধু এরশাদের নাম ও টার্গেট মুছে ফেলার ঘৃণ্য পরিকল্পনা করছেন তিনি। চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের ভাষা না বুঝে পাল্টা জবাব দিয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর সংগ্রামের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন। অনুষ্ঠান. এছাড়াও কিছু নেতাকে অব্যাহতির কথা মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

অতীতে সারাদেশে করোনা মহামারী চলাকালে আমাদের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম সেন্টুর নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরীর ২৫টি থানা ও ৫৪টি ওয়ার্ডে সম্মেলন করতে পেরেছি। এবং পরিত্যক্ত নেতাকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছিল, যা অনৈতিক। এমতাবস্থায় আমরা এরশাদপ্রেমী নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে তার বিকৃত সংগঠনে থেকে প্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই আমরা আজ সংগঠন থেকে জিএম কাদেরের গণপদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি,” বলেন জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও রিসার্চ উইংয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক সাহিন আরা সুলতানাসহ বিভিন্ন থানার পদত্যাগী নেতারা।

এ সময় জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরয়, ভাইস চেয়ারম্যান আমানত খান, সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াহিয়া চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ খোরশেদ আলম খুশুসহ থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.