বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পানির ন্যায্য অংশের দাবি

0

ষ্টাফ রিপোর্টার/- ‘জলবায়ু ও পানি’ বিতর্কে রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এ কারণে জলবায়ু ও নদী গবেষকরা বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোকে বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে উজানের পানির ন্যায্য অংশ সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে পানি ও নদী ব্যবস্থাপনায় তরুণদের সম্পৃক্ত করে টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ‘রিভার রাইটস: ইন্টিগ্রেটেড বেসিন ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক সেশনে বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।

‘ওয়াটার, রিভারস অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ: বিল্ডিং দ্য ফিল্ড অব রেজিলিয়েন্স’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন শেষ হয়েছে।

এ বছর ১০টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়গুলো হলো- জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীর অধিকারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক; জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদী: ঝুঁকি এবং দুর্বলতা; উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তি এবং সহনশীলতা; জল, নদী এবং শহুরে স্থিতিস্থাপকতা: অবকাঠামো এবং বাস্তুতন্ত্র; নদী, সহনশীলতা ও মানুষ; নদীর অধিকার: অববাহিকাগুলির সমন্বিত ব্যবস্থাপনা; বহুপাক্ষিক জল সহযোগিতা এবং সমতা; জীবন্ত জাদুঘর এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা; জল এবং নদী: একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য যুবকে জড়িত করা: প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করা।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার উজানের দেশগুলো ডাউনস্ট্রিম দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চায় না’।

এসব দেশের মধ্যে বেশিরভাগ চুক্তিই প্রতিক্রিয়াশীল। যা উজানে বা শক্তিশালী দেশগুলো একতরফাভাবে করে থাকে। তারা বহুপাক্ষিকভাবে নয় বরং দ্বিপাক্ষিকভাবে পানি ও নদীর বিরোধ সমাধানের প্রবণতা রাখে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে বহুপাক্ষিক আলোচনা প্রয়োজন।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (C3ER) এর ইমেরিটাস প্রফেসর ডক্টর আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু ও পানি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে রাজনীতি বোঝা অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য নিরাপত্তাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে এবং এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পানি অপরিহার্য। জলবায়ু রাজনীতিকে আরও ভালভাবে বোঝার মাধ্যমে, আমাদের অবশ্যই জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে।’

‘নদী, সহনশীলতা ও মানুষ’ শীর্ষক সেশনে ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. খায়রুল ইসলাম বলেন, “বেশিরভাগ সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে ঘিরে। আমরা এখন নদীর অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বেশিরভাগই মানুষের কারণে। পানি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং আমরা একে দূষিত করে চলেছি। যদি মানুষ সচেতন, আমরা এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারি।আমাদের উচিত ছিল জলাধারগুলোকে বাঁচানোর উপায় খুঁজে বের করা।’

সুইডেনের দূতাবাসের প্রথম সেক্রেটারি এবং ডেপুটি হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন, নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম জলবায়ু ন্যায়বিচার আন্দোলনের পাশাপাশি জল আলোচনায় তরুণদের অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দিয়েছেন। তিনি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য তরুণদের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের ওপর জোর দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ পানি বণ্টন চুক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু পৃথিবীর অন্য দেশে এমনটা দেখা যায় না।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশে পানির কোনো ঘাটতি নেই, আমাদের এই প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সম্মেলনের শেষ দিনে অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ডিরেক্টর রাজমি ফারুক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.