এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার হার বাড়ছে বাংলাদেশে

0

কামাল হোসেন/- বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসার হার প্রতিবছর বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভাবনের ফলে এইডসে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। এখন সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এইডস আক্রান্ত হলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। জাতিসংঘের চাহিদা অনুযায়ী, এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়ে আসার জন্য লক্ষ্য হচ্ছে অন্তত ৯৫ শতাংশে নিয়ে আসা। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

জাতিসংঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউনএইডস এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখন এইডস আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ। ইউএনএইডসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে দেশে চিকিৎসার আওতায় রয়েছে মাত্র আট হাজার রোগী। এই আক্রান্ত হয়ে এই বছরে বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের। আর এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের।

ইউএনএইডসের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর  ড. সায়মা খান বলছেন, ‘‘ইউএনএইডসের আগামী পাঁচ বছরের কৌশল হচ্ছে, ইউ ইজ ইকুয়্যাল টু ইউ। আনডিটেক্টবল ইজ ইকুয়্যাল টু আনট্রান্সমিসেবল। অর্থাৎ আমি যদি ওষুধ খেয়ে দেহের ভাইরাসকে এমন একটা পর্যায়ে কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি যে, সেটা আর ছড়াতে পারবে না। তাহলে আমার এইচআইভিও ছড়াচ্ছে না, আমিও বেশিদিন বাঁচতে পারবো।’’

‘‘এআরভি ড্রাগসে আধুনিক অনেক ওষুধ এসেছে, সেটার সাইড ইফেক্ট অনেক কম কিন্তু কার্যকারিতা অনেক বেশি। একজনের দেহে ভাইরাস অনেক কমিয়ে দিতে পারে, তবে একেবারে নির্মূল করতে পারে না। ট্রিটমেন্টটা এতো ভালো যে, নিয়মিত ওষুধ খেয়ে গেলে, আজীবনই খেতে হবে এবং ভাইরাল লোডটা কমিয়ে রাখতে হবে। ফলে তার নিজের দেহেও কোন ইমপ্যাক্ট ফেলবে না, অন্যদের দেহেও ছড়াবে না। তাহলে আক্রান্ত হলেও একজন ব্যক্তি একেবারে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে,’’ তিনি বলছেন।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম যে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন, তিনি এখনো সুস্থ সবলভাবে বেঁচে রয়েছেন। তিনি নিয়মিতভাবে এইচআইভি চিকিৎসা কর্মসূচীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।

বাংলাদেশে সরকারিভাবে এইডসের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এই সেবা নেয়ার সুযোগ এখনো নেই। এইডস শনাক্ত করার জন্য সারা দেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে আর চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় ১১টি কেন্দ্র থেকে।

বাংলাদেশের সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী, যাদের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৮৪ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে পারছে। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ।

এইডসের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেন। তবে তাদের নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করতে হয় এবং চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। বড়দের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ আর শিশুদের জন্য সিরাপ দেয়া হয়ে থাকে। তবে কারও যদি এইডসের পাশাপাশি অন্য কোন শারীরিক জটিলতা থাকে, তাহলে তার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেই রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।

বাংলাদেশ কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটিং মেকানিজমের (বিসিসিএম) সদস্য হাফিজ উদ্দিন মুন্না বলছেন, বাংলাদেশের সরকার এইডস রোগের চিকিৎসায় অনেক চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.