অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: প্রধানমন্ত্রী

0

ষ্টাফ রিপোর্টার/- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এ দাবি জানান। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না রাতে ভোট হয়েছে, দিনে ভোট হয়েছে রাতে, কারচুপি হয়েছে। এটা বলার ক্ষমতা কারো নেই।’

আপনারা দেখেছেন এবার অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনার অনুমতি দিয়েছি। আমরা হস্তক্ষেপ করিনি, সহযোগিতা করেছি।’

টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত সবকিছুই ন্যস্ত। আমরা কখনো হস্তক্ষেপ করিনি।’

“আমি আমাদের আইন প্রয়োগকারী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অনেকের অনেক স্বপ্ন, অনেকে নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল, ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে আসতে বাধা দিতে চেয়েছিল। তারপরও সাধারণ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটা সহজ নয়, অনেক বড়। আওয়ামী লীগ ও আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছিল, তখন অন্য একটি দল নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছে বলেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। আপনার এই বৈঠক থেকে আমি সরাসরি বঙ্গভবনে যাব, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার চিঠি হস্তান্তর করব এবং তারপর আমরা সরকার গঠন করব।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী অসৎ বলেও জনসভায় অভিযোগ করেন দলটির সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসেছে, তারা কিছু দল তৈরি করে এবং বাকি ক্ষমতা তুলে দিয়ে কিছু এলিট শ্রেণী তৈরি করে। তার উপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীই এর বিপক্ষে ছিলেন, যদিও ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ে। অধিকাংশ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। মুক্তির পর তারা দলকে ভালোভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন।’

1981 সালে আমি দলের সভাপতি নির্বাচিত হই। আমি এমন একটি দেশে ফিরে এসেছি যেটি আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করবে না, ক্ষতিপূরণ জারি করবে এবং বিভিন্ন দেশে দূতাবাস দেবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর ও রাজাকার কর্তৃক গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ও লুটপাট করা হয়। আমাদের দেশে মা-বোনদের পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, ক্যাম্পে নিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করা হয়। ওই সব যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার শুরু করেছিলেন জাতির পিতা, ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের ছেড়ে দিন, মন্ত্রী করুন, প্রধানমন্ত্রী করুন, ক্ষমতায় বসান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে খুনি, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী, তারা ক্ষমতায়। সেই অবস্থায় ফিরে এলাম। জনগণের ভোট ও ভাত নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে ফিরে আসি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কী কাজ করতে হবে, তিনি (বঙ্গবন্ধু) কীভাবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গড়বেন, এই জায়গায় তিনি বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতা শুনলে মাঝে মাঝে অবাক হই। দীর্ঘ ৯ মাস জেলে, তিনি মিলওয়ালা জেলে, শীতকালে বরফ, গ্রীষ্মে গরম। কিভাবে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রেখেছিল, ঠিকমতো খাওয়ায়নি। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোন সংবাদপত্র বা কিছু ছিল না। তাকে বিচার করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মাটিতে নেমে ছুটে আসেন বাংলার মানুষের সামনে।

১০ জানুয়ারি তিনি এখানে বক্তৃতা দেন। ওই ভাষণে তিনি তুলে ধরেন একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চিন্তা, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের ভাগ্য বিনির্মাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কিছুই ছিল না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত তাদের আশ্রয় নেই, ঘর নেই, ভবিষ্যৎ নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়তে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস মুছে ফেলা ও ইতিহাস বিকৃতি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোট চুরির খেলা শুরু হয়েছে। মানুষের অধিকার নিয়ে খেলা করছে।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.