নির্বাচনের আর একদিন বাকি ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি

0

ষ্টাফ রিপোর্টার/- একদিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশে ৪২ হাজার ১৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০০টিকে উচ্চ ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ সদর দফতর। এসব কেন্দ্রে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এর ভিত্তিতে এই ৩০০ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, ‘নিরাপত্তা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রকে কয়েকটিতে ভাগ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মূলত, যেসব কেন্দ্রে সহিংসতার ঝুঁকি থাকে, সেসব কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এছাড়া আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে কেউ ঠেকাতে পারবে না বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টার আশঙ্কা রয়েছে। আবার, সন্ত্রাসী হামলার মতো বহিরাগত হামলার হুমকি রয়েছে। এসব বিবেচনায় নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

অনেকেই এবারের নির্বাচনে কোনো ঝুঁকি দেখছেন না। অনেকে বলছেন, বিএনপি দ্বন্দ্বে না গেলেও কিছুটা উত্তেজনা রয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছেন। সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে। এমন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।

পুলিশ ছাড়াও সেনা-নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসারসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটের মাঠে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে সারাদেশে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে। ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার কেন্দ্রকে ‘সঙ্কটজনক’ এবং ৩০০ কেন্দ্রকে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা। “গুরুত্বপূর্ণ” কেন্দ্রগুলিকেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়, পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত ১০ হাজার ভোটকেন্দ্র এবং ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ৩০০ ভোটকেন্দ্রের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা আনতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশসহ ১৫ থেকে ১৭ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল থাকবে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় বিজিবি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা থাকবেন।

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সান্তারাসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে তাদের অভিমত। এজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। প্রয়োজনে তারা বিজিবি এবং সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেবে।

শুক্রবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটের জন্য মাঠে থাকবেন আড়াই লাখ সদস্য। কিন্তু আমরা ঝুঁকি কেন্দ্রগুলিকে শুধুমাত্র সহিংসতার দ্বারা তালিকাভুক্ত করি না, বরং অন্যান্য বিষয়গুলিকে বিবেচনায় নিয়েও। প্রথমত, প্রত্যন্ত অঞ্চল। যেমন তিন পার্বত্য জেলা। দ্বিতীয়ত, উপজেলা সদর থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কেন্দ্রগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও প্রার্থীর বাড়ির আশেপাশের কেন্দ্রগুলি বিবেচনায় নেওয়া হয়। আবার চরে অনেক কেন্দ্র রয়েছে। সব মিলিয়ে ঝুঁকি ঘনীভূত হয়। এসব কেন্দ্রে চার থেকে পাঁচজন পুলিশ সদস্য থাকেন। সাধারণ কেন্দ্রে দুই পুলিশ সদস্য থাকেন। এসব কেন্দ্রে সশস্ত্র পুলিশের সংখ্যাও বেশি।

অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ভোট কেন্দ্রে অন্তত ২৪ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো নাশকতা বা সন্ত্রাসের হুমকি নেই। তবে সবকিছু মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা বলয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ২ হাজার ১৪৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে মোতায়েন করা হয়েছে, যা গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার বেশি। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজিবি-কোস্টগার্ড ১১ দিন, র‌্যাব-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন আট দিন এবং সশস্ত্র বাহিনী ১০ দিন মোতায়েন ছিল। 5 জানুয়ারী 2014 এবং 29 ডিসেম্বর 2008 তারিখে সংসদ নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় 50,000 সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে দুইজন সশস্ত্র পুলিশ, অস্ত্রসহ একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিসোঁটা নিয়ে একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে এক বা দুই গ্রাম পুলিশ সদস্য, ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল নিরাপত্তা দেবে। সব সাধারণ ভোটকেন্দ্র। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে (যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত) অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬ থেকে ১৭ জন সদস্যের দল মোতায়েন করা হবে।

পুলিশ ছাড়াও সারাদেশে বিজিবির ১ হাজার ১৫১ প্লাটুনের ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য মাঠে নেমেছে। নির্বাচনকে ঘিরে ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৩ দিন পুলিশ, র‌্যাব ও সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছেন তারা। র‌্যাব সদর দপ্তরে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ হিসেবে ১৫টি টহল দল প্রস্তুত থাকবে। সারাদেশে ২৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশে সাত শতাধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে। তাদের সঙ্গে থাকবে ৫ লাখ ১৬ হাজার আনসার। নির্বাচনের নিরাপত্তায় সেনাসদস্য ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ ৫০ হাজার সদস্য কাজ করছেন। শুক্রবার সকালে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.