৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে দেশের খেলাপি ঋণ!

0
বাণিজ্য প্রতিবেদকঃ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে আগামী মার্চের মধ্যে সব ধরনের ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা কঠোর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া অবলোপনকৃত ঋণ ৬০ হাজার কোটি, অর্থঋণ আদালতে আটকা দুই লাখ ৭৮ হাজার কোটি।

আদালতে রিট করার মাধ্যমে স্টে অর্ডার নেওয়া ৭৬ হাজার কোটি টাকাও আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী খেলাপির খাতায় যুক্ত হবে। তাই আগামী বছর প্রকৃত হিসাবায়ন করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের জন্য খসড়া দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে। শিগগিরই এই দিকনির্দেশনা প্রকাশ করা হবে।

২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে তা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হুসনে আরা শিখা। খসড়া নির্দেশিকা অনুসারে, ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পর তিন মাসের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংক যেকোনো ধরনের ঋণকে বকেয়া হিসেবে গণ্য করবে। বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে ঋণ পরিশোধের তারিখের ছয় মাস পর সেই ঋণ বকেয়া হিসেবে গণ্য হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই ধাপে খেলাপি ঋণের নিয়ম কঠোর করতে যাচ্ছে।

প্রথম দফায় মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা। মেয়াদি ঋণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণের ঋণ। এটি পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সূচি আছে। এর নির্দিষ্ট বা শর্তসাপেক্ষে পরিবর্তনশীল সুদের হার আছে। গত সেপ্টেম্বরে এর প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।কৃষি ও এসএমই ঋণসহ সব ধরনের ঋণ কঠোর শ্রেণিবিন্যাস বিধিমালার আওতায় আসবে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের অনুপাত এখন সবচেয়ে বেশি। দেশের মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই মন্দ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তার মতে, ঋণ শ্রেণীকরণের নিয়ম কঠোর করা হলে এটি আরো বেশি হবে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। তারা এই সময়সীমার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ঋণ শ্রেণীকরণ বিধিমালা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একসময় ঋণ শ্রেণীকরণে আন্তর্জাতিক রীতি মানলেও ২০১৫ সালে সেখান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসে।

- Advertisement -

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.