বিনোদন ডেস্ক ‘গদার-২’ সিনেমা দিয়ে এখন আলোচনায় রয়েছেন বলিউড তারকা সানি দেওল। সিনেমাটি ৬০০ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে। এই সফলতা উদ্যাপন করতে আয়োজন করা হয় ‘সাকসেস পার্টি’র। সেই পার্টির তারকা দেখে বলিউডসহ গোটা ভারতের দর্শক যেন ধাক্কা খান। কারণ, সেই আসরে হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ খান। যে শাহরুখের সঙ্গে দীর্ঘদিন সানি দেওলের অভিমান, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত হয়নি। হঠাৎ তাঁদের একসঙ্গে দেখে ভক্তদের প্রশ্ন, দীর্ঘদিনের দুই বন্ধুর ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ কি তাহলে শেষ হয়ে গেল? নাকি সানি দেওলের সঙ্গে শাহরুখ, আমির খানদের এ আড্ডার পেছনে অন্য রহস্য রয়েছে। শাহরুখের সঙ্গে সানি দেওলের দ্বন্দ্ব শুরু সেই ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডর’ সিনেমা থেকে। সিনেমাটির নায়ক ছিলেন সানি দেওল, নায়িকা জুহি চাওলা। খলনায়কের ভূমিকায় ছিলেন শাহরুখ খান। সিনেমা মুক্তির পরে দেখা গেল, ফলাফল উল্টো। যেখানে নায়কের প্রশংসা পাওয়ার কথা, সেখানে ভক্তরা খলনায়কের প্রশংসা করছেন। রোমান্টিক সিনেমা ‘দিওয়ানা’ মুক্তির পরে শাহরুখকে ডার্ক লুকে গ্রহণ করেন দর্শক। এটিই হয় শাহরুখের টার্নিং পয়েন্টের অন্যতম সিনেমা। কিন্তু সেই অর্থে সানি দেওল সিনেমা থেকে তেমন কোনো প্রশংসাই পাননি। পরে এই নায়ক জানিয়েছিলেন, সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যশরাজ চোপড়া তাঁর সঙ্গে কথার বরখেলাপ করেছে।পরবর্তী সময়ে সানি দেওল গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি আর কখনোই যশরাজ ফিল্মের সঙ্গে কাজ করব না। তারা আমার সঙ্গে কথার বরখেলাপ করেছে। তাদের নিয়ে আমার কোনো ভালো স্মরণীয় ঘটনা নেই। তারা বিশ্বাস নষ্ট করেছে।’ ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। পরে দুই তারকার এই দ্বন্দ্ব আরও বেশি প্রকাশ্যে আসতে থাকে। একসময় তাঁদের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। কেউ কারও ছায়াও দেখেননি দীর্ঘদিন। কোনো অনুষ্ঠানেও তাঁদের তেমন পাওয়া যেত না।এই তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে তাঁরা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। দীর্ঘদিন পরে এ ঘটনা আবার গণমাধ্যমে আসে ২০১৯ সালে। ২০১৯ সালে সানি দেওল ইন্ডিয়া টিভির ‘আপ কি আদালত’ অনুষ্ঠানে শাহরুখের সঙ্গে বিবাদ নিয়ে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে আবার মুখ খোলেন। সেই সময় তিনি বলেন, ‘দিন শেষে দর্শক আমাকে সিনেমার মাধ্যমেই ভালোবেসেছেন। এমনকি তাঁরা শাহরুখকেও ভালোবাসেন।’ এমন মন্তব্যে ভক্তদের ধারণা হচ্ছিল, হয়তো শেষ হতে যাচ্ছে তাঁদের বিরোধ। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেও একপর্যায়ে বোঝা যায়, এই সম্পর্কের মিটমাট সহজে হবে না। সানির কথায় সেদিন উঠে আসে, ‘আমাদের ইস্যুর বিষয় একমাত্র সিনেমাটি নিয়ে। সিনেমায় খলনায়কের চরিত্রটি যে মহিমান্বিত করা হয়েছিল, সেটা আমি জানতাম না। আমি সব সময় সিনেমার মানুষদের সঙ্গে কাজ করেছি খোলামনের মানুষ হিসেবে, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করেছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন, যাঁদের সঙ্গে ম্যানার বিষয়টি যায় না। মনে হয়, তাঁরা স্টারডম দেখাতে চান।’ ধারণা করা হচ্ছিল, তাঁদের সম্পর্ক সহজে আর ভালো হবে না। কিন্তু সেটা সিনেমার মতোই সত্য হয়ে এল ‘গদার-২’ সিনেমার কল্যাণে। হঠাৎ করেই শাহরুখ খান তাঁর টুইটারে জানান, ‘গদার-২’ সিনেমাটি দেখে তাঁর ভালো লেগেছে। এরপরই নড়েচড়ে বসে গোটা বলিউড। তাহলে দুই তারকার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে? এই নিয়ে জুম নিউজের মুখোমুখি হতে হয় সানি দেওলকে। তখনো যেন চমক অপেক্ষা করছিল। পরে অবশ্য চমকেই দিলেন। কারণ, শুধু শাহরুখই নন, তাঁর স্ত্রী গৌরীর সঙ্গেও কথা হয়েছে দেওলের। কী কথা হয়েছে, সেসব জানান গণমাধ্যমে। সানি দেওল বলেন, ‘শাহরুখ খান সিনেমাটি দেখেছে। দেখার আগে সে আমাকে ফোন করেছিল শুভকামনা জানাতে। সে খুবই খুশি সিনেমাটি নিয়ে। সে আমাকে বলেছে, ‘‘আমি খুবই খুশি। তুমি এর সত্যই দাবিদার।” আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি। পরে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তারা পরিবার নিয়ে সিনেমাটি দেখেছে। পরে তারা জানিয়েছে, ভালো লেগেছে। পরে সেটা টুইট করেছে।’ ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। এর পরের ঘটনা যেন অন্য কথা বলে। সানি দেওলের সাকসেস পার্টিতে একসঙ্গে হাজির হলেন সিনেমার সব তারকা। তাঁদের মধ্যমণি হয়ে উঠলেন সানি ও শাহরুখ। সঙ্গে আমির খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমারসহ আরও অনেক তারকা। গত বছর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বলিউডের তেমন কোনো সিনেমাই সাড়া জাগাতে পারেনি। কারণ, একের পর এক বলিউডের সিনেমা ফ্লপের খাতা ভারী করছিল। বক্স অফিসে এমন দুর্দিন বলিউডকে অনেক দিন দেখতে হয়নি। সমালোচকদের কথায় উঠে এসেছিল, বলিউড যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। আমির খান, অক্ষয় কুমার, জন আব্রাহাম, শহীদ কাপুরসহ অনেক বলিউড অভিনেতারই পারিশ্রমিক পর্যন্ত কমানোর খবর পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যদিকে চিত্র ছিল ভিন্ন। বলিউডের দাপট ছাপিয়ে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছিল কন্নড়, তেলেগু, তামিল, মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাগুলো। এমন সময় বলিউডে আশার আলো হয়ে মুক্তি পায় ‘পাঠান’। ২৫ জানুয়ারি যেন সব হিসাব বদলে দেয়। বক্স অফিসে দাপট দেখায় সিনেমাটি। আয়ে রেকর্ড গড়ে। বলিউড তার হারাতে বসা গৌরব ফিরে পায়। সেই দাপটের কথা ‘পাঠান’ সিনেমার শেষ দৃশ্যে শাহরুখ আর সালমানের কথোপকথনে উঠে আসে। পর্দায় ভিন্নভাবে সেটা বলার চেষ্টা করলেও দর্শকেরা ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন। সেখানে আভাস দেওয়া হয়েছিল বলিউড সিনেমাকে বাঁচাতে ইন্ডাস্ট্রির তরুণদের ওপর ভরসা করে লাভ নেই, নিজেদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। আর সেই থেকে একের পর এক যেন সেটাই ঘটছে। আমির, সালমানরাই ভরসা।তরুণদের সিনেমা ছাপিয়ে ভারতে এখন আলোচনায় ‘গদার-২ ’। ৫৪ বছর বয়সে নতুন ধামাকা দেখালেন সানি দেওল। হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টু ডে, এনডিটিভিসহ একাধিক গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, বলিউডকে তার গৌরব রক্ষার জন্য এক হতে হবে। ‘গদার-২’–এর সাকসেস পার্টি সেই কথাই বলে। সেখানে আসতে ভোলেননি ২২ বছর আগে ২০০১ সালে বক্স অফিসে সানি দেওলের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া আমির খান। প্রায় দুই যুগ পরে তাঁদের দেখা। পয়লা সেপ্টেম্বর সেই সাকসেস পার্টিতে একসঙ্গে তাঁরা দীর্ঘ সময় কথা বলেন। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন। এটা যেন প্রমাণ করে, বলিউডকে টিকে থাকতে হলে তারকাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকাটা জরুরি। এই প্রচারণায় এগিয়ে থাকবে বলিউড সিনেমা।