সৌদি আরবে ফ্যাশন শোতে কাবাসদৃশ বস্তু নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ

0
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সৌদি আরবের একটি ফ্যাশন শো নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই ফ্যাশন শো নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসলামিক পণ্ডিতরা। যে বিষয়কে নিয়ে বিতর্ক, তা হলো এই ফ্যাশন শোতে ‘গ্লাস ইন্সটলেশন’ (কাচ দিয়ে তৈরি একটা বস্তু) দেখানো হয়েছিল, যা পবিত্র কাবা শরিফের মতো দেখতে। সৌদি আরবের বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসব ‘রিয়াদ সিজনে’ এই ইনস্টলেশনকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে মূলধারার আরব গণমাধ্যম  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

- Advertisement -

সমালোচকরা বলছেন, এটা ইসলামের পবিত্রতম স্থানের অবমাননা করা। তবে সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যম সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। গুজব রুখতে কাজ করা এক সৌদি সংগঠনও জানিয়েছে, ফ্যাশন শোতে রাখা যে কাঠামোকে ঘিরে এত বিতর্ক, তা একটা কাচের তৈরি ঘনকাকৃতির একটি বস্তু মাত্র।

বিষয়টা নিয়ে শোরগোল হওয়ার পর সৌদি আরবের ‘অ্যান্টি রিউমর অথরিটি’ বা গুজববিরোধী কর্তৃপক্ষ ওই অনুষ্ঠানে পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তৈরি কোনো বস্তু ব্যবহারের বিষয়টা সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটা কাচের তৈরি একটা ঘনকাকৃতির কাঠামো, যার সঙ্গে কাবার কোনো সম্পর্ক নেই। ‘অ্যান্টি রিউমর অথরিটি’ হলো একটা স্বাধীন সৌদি মিডিয়া প্ল্যাটফরম, যা অনলাইন রিউমর বা গুজবকে ট্র্যাক করে ও তার সত্যতা যাচাই করে।

তবে সমালোচনার উত্তরে সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যমের ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্ব এই ঘটনাকে ‘ইসলামের অবমাননা’ বলে মনে করেছেন। কট্টরপন্থী কেউ কেউ আবার আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, এই ‘বিকৃত’ প্রদর্শনীতে যা করা হয়েছে তা ‘শয়তানের কার্যকলাপ’।

সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যম এসব সমালোচনাকে ওই দেশকে বদনাম করার চেষ্টা বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

 

কড়া সমালোচনা
ইন্টারনেটে টেলিগ্রাম ও ফেসবুকে এই অনুষ্ঠানের ভিডিও ও ছবি শেয়ার করা হচ্ছে। কানাডীয় ইসলামী লেখক তারিক অব্দ আল-হলিম টেলিগ্রামে হিদায়াত আলসারি নামে পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আরব উপদ্বীপে বহুঈশ্বরবাদ একটা আনুষ্ঠানিক ধর্ম হিসেবে ফিরে এসেছে।’

তারিক অব্দ আল-হলিম যা লিখছেন সেটি ফ্যাশন শোতে ব্যবহৃত কাবার মতো দেখতে ওই কাঠামোর দিকেই ইঙ্গিত করে। কেউ কেউ আবার একে ‘পৌত্তলিক প্রথার’ সঙ্গেও তুলনা করেছেন।

এ ছাড়া কট্টরপন্থীদের অনেকেই এই বিতর্কের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নাম জুড়ে দিয়ে তাকেও নিশানা করেছেন। 

নিশানায় সৌদি যুবরাজ
মরক্কোর ধর্মীয় নেতা আল-হাসান বিন আলি আল-কিত্তানি বলেছেন, এই ঘটনা মূল্যবোধের অবক্ষয় ও দুর্নীতির লক্ষণ। তার অভিযোগ, বেশির ভাগ পণ্ডিতই এই ঘটনায় নীরব থেকেছেন। শুধু কয়েকজন ‘সত্যের কণ্ঠস্বরই’ এই বিষয় নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। এর মধ্যে মধ্যে অনেকেই ফ্যাশন শোর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন পরিবারের সমালোচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই জিহাদি ও অনেক কট্টরপন্থীদের কাছে ‘শত্রু’ হিসেবে তারা পরিচিত।

সিরিয়াভিত্তিক চিন্তাবিদ আবদেল রহমান আল-ইদ্রিসির দাবি, ‘কাবার মতো দেখেতে কোনো কাঠামোর চারপাশে মডেলদের নাচ আসলে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে হয়েছে।’

তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের একজন সমর্থক ফেসবুকে সৌদি যুবরাজকে ‘অনৈতিক ব্যভিচারী’ বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি অভিযোগ তুলেছেন, তিনি (সৌদি যুবরাজ) ‘ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন।

প্রসঙ্গত, তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সমর্থকদের লক্ষ্য প্রায়ই সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশকে নিশানা করা। তারা এসব দেশকে ইসরায়েল ও পশ্চিমা স্বার্থকে ‘রক্ষাকারী’ হিসেবে বিবেচনা করে।

রিয়াদ সিজন কী?
রিয়াদ সিজন সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত একটা বিনোদন, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক বার্ষিক অনুষ্ঠান। রিয়াদ সিজন ২০২৪-এর অংশ হিসেবে লেবানিজ ডিজাইনার এলি সাব একটি ফ্যাশন শো করেছিলেন। সে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে এই অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক আপত্তি জানিয়েছেন।

মঞ্চে প্রদর্শন করা ওই কাঠামো ছাড়াও তারা সমালোচনা করেছেন ফ্যাশন শোর টাইমিং নিয়ে। গাজা উপত্যকায় ও লেবাননে যুদ্ধের মাঝে এই ফ্যাশন শো আয়োজন করা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক আরবি সংবাদপত্র রায় আল-ইয়ুমের এক প্রতিবেদনে, রিয়াদ সিজনের ডিজাইনার ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে উপেক্ষা করার অভিযোগও আনা হয়েছে।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফরম এক্সে একজন জনৈক ব্যক্তি কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘গাজায় গণহত্যার মধ্যে সৌদি আরব নৃত্যশিল্পী ও গায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।’

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.