বিশেষ প্রতিনিধি আগামী রবিবার সুইডেনের জাতীয় নির্বাচন। এবারের প্রচারাভিযানে দিনে দিনে ভোটের লড়াই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে সুইডেনের কাউন্টি কাউন্সিল এবং মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনও।সুইডেনে ক্ষমতার লড়াই হয় মূলত দুই জোটের মধ্যে।এক জোটে থাকে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের নেতৃত্বে পরিবেশবাদী, ভেন্সস্তের (বাম) ও সেন্টের (কৃষক) পার্টি এবং অন্য ব্লকে থাকে মডারেট পার্টির নেতৃত্বে ক্রিস্ট ডেমোক্র্যাট এবং লিবারেল পার্টি। উগ্র-ডানপন্থী সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলটি এত দিন পার্লামেন্টের ভারসাম্য রক্ষাকারী দল হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও এবারের নির্বাচনে তারা মডারেট পার্টির ছাতার নিচে ভিড়তে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে মডারেটরা তা নাকচ করে দিয়েছে।সম্প্রতি ফ্রান্সভিত্তিক এক আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যায়, দুই জোটের ব্যবধান খুবই সামান্য এবং লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। জরিপ বলছে, উগ্রপন্থী সুইডেন ডেমোক্র্যাট তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে বর্তমানে ২১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছে।এ ছাড়া সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ৩০.৪, মডারেট ১৭.০, ভেন্সতের ৮.৫, লিবারেল ৪.৬, ক্রিস্ট ডেমোক্র্যাট ৫.৫, সেন্টার ৬.৯ এবং অন্যান্য দল ১.৮ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে।দুই জোটের ব্যবধান খুব কম হওয়ায় কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, কোন দলের নেতৃত্বে কোন জোট ক্ষমতায় যাবে।
সুইডিশ পার্লামেন্ট রিক্সদগের মোট আসনসংখ্যা ৩৪৯টি। এর মেয়াদ চার বছর। সুইডেনের নির্বাচনী আইনে কোনো দল নির্বাচনে প্রদেয় মোট ভোটের ন্যূনতম ৪ শতাংশ না পেলে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। ভোটাররা ভোট দেয় দলকে, প্রার্থীকে নয়। প্রতিটি দল বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় তাদের প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। বিভিন্ন দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তালিকার প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।সাম্প্রতিককালে আইনের কিছুটা পরিবর্তন করে ‘ব্যক্তিগত ভোট’ নামের প্রথার প্রবর্তন করা হয়েছে। কোনো দল যেভাবেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করুক না কেন, ভোটাররা দলকে ভোট না দিয়ে একজন পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে টিকচিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট কাউকেও ভোট দিতে পারেন। যথেষ্ট ভোট পেয়ে তালিকায় একদম নিচের দিকে থাকা প্রার্থীও আইন প্রণেতা নির্বাচিত হতে পারেন। ‘ব্যক্তিগত ভোট’ পদ্ধতিতে জিততে হলে দল অনুযায়ী কমপক্ষে চার থেকে সাত হাজারের মতো ভোট পেতে হয়।বিশ্বজুড়ে অন্যতম আদর্শ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত আধুনিক সুইডেনের রূপকার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল। তারা বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৯০ বছর দেশ শাসন করেছে। তবে সাম্প্রতিককালে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসহ সব দলেই চলছে নেতৃত্বের প্রবল অভাব। অনেকটা তারই সুযোগে উগ্র-বর্ণবাদী দল ‘সুইডেন ডেমোক্র্যাট’ ২০১৮ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টের ৬১টি আসন লাভ করে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।