LastNews24
Online News Paper In Bangladesh

সিদ্ধ চালে শুল্ক নেই, তবু দাম বাড়ছে

0

বিশেষ প্রতিনিধি ভারত সরকার গত বৃহস্পতিবার আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। নন-বাসমতী (সিদ্ধ) চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক আরোপ করেনি দেশটি। কিন্তু এই শুল্কারোপের অজুহাতে বাংলাদেশে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ সিদ্ধ চালের দামও (৫০ কেজির) প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় শিগগিরই খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আতপ চাল রপ্তানিতে ভারতের শুল্ক আরোপ গত শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। দেশটি ভাঙা চাল (খুদ) রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর আতপ চালে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে সিদ্ধ চালে কোনো শুল্ক আরোপ করা হয়নি। এ কারণে সিদ্ধ চাল আগের মতোই শুল্কমুক্ত পণ্য হিসেবে ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে দেশের বাজারে চালের দামে লাগাম টানতে সম্প্রতি আমদানির শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও কমিয়েছে সরকার, যার কারণে ব্যবসায়ীরাও প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি করেছেন। এর প্রভাবে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানেই দেশের বাজারে প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমে চালের দাম। এখন মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারণে চালের দাম কমাতে সরকারের সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারত থেকে আমরা যেসব সিদ্ধ চাল আমদানি করছি, সেগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ হয়নি। শুল্ক আরোপ হয়েছে মূলত আতপ চালে। এই চাল বাংলাদেশে খুবই কম পরিমাণ আমদানি হয়। তাই এটিতে শুল্ক আরোপের প্রভাব চালের বাজারে পড়ার কথা নয়। ভারতে রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের কথা শুনেই আমাদের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছে। ’ এই কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমদানির চাল হিলি বন্দর পর্যন্ত আসতে কত খরচ হচ্ছে এবং বাজারে কত করে বিক্রি হচ্ছে—এই দুটি বিষয় যদি সরকারের পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো যথাযথভাবে তদারক করে তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

গত দুই দিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারিতে গত দুই দিন আগে মোটা চাল ব্রি-২৮ (৫০ কেজির) বস্তাপ্রতি দাম ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা, যা এখন দুই হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট ছিল তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকা, যা গতকাল রবিবার বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। নাজিরশাইল আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ৫০ কেজির বস্তা তিন হাজার ৫৫০ থেকে তিন হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের আতপ চাল বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯০০ থেকে চার হাজার টাকায়।

গতকাল কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো. সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতের চাল বাজারে আসায় দাম কিছু কমে গিয়েছিল। গত শুক্রবার থেকে পাইকারিতে আবার দাম বেড়ে গেছে। মোটা চাল বস্তায় ৫০ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট চাল বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নাজিরশাইল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর চালের অন্যতম পাইকারি বাজার হলো বাবুবাজার। এই বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারত চাল রপ্তানির ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছে, সেই চাল দেশের বাজারে আসতে আরো অনেক সময় লাগবে। এই অজুুহাতে যারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে, তারা অন্যায় করছে। 

তবে পাইকারিতে চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. সলিম উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আগের দামেই চাল বিক্রি করছি। ভারত যদি সব চালের ওপর রপ্তানি শুল্ক আরোপ করে তাহলে তো সব চালের দাম বাড়বে, আর যদি শুধু আতপ চালে শুল্ক আরোপ করে তাহলে তার প্রভাব সব চালে পড়বে না। রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চালের দাম বাড়েনি, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে চাল কেনার কারণে বর্তমানে পাইকারি বাজার সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাই দু-এক দিনের মধ্যে চাল কিনতে গেলে পাইকারি বাজার বোঝা যাবে। 

দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আট হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে মেসার্স কাজল ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। মেসার্স কাজল ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার কাজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারত সরকার চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করেছে; সেটি কি শুধু আতপ চালে, নাকি সব ধরনের চালে তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। যে চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে, সেটি আমদানিতে খরচ পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বাড়বে, যার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়বে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার জুন মাসের শেষ দিকে ধাপে ধাপে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতি দেয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নন-বাসমতী (সিদ্ধ) ও আতপ চাল প্রায় ৯০ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে।

শুল্কমুক্ত সিদ্ধ চাল আমদানি চলছে

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে শুল্কমুক্তভাবেই সিদ্ধ চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, ‘গত ২৩ জুলাই থেকে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন হিলি দিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার টন চাল আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আতপ চাল রয়েছে। নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় দুই দিনে হিলি বন্দর দিয়ে আতপ চাল আমদানি হয়নি। এতে চালের বাজারেও তেমনভাবে কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক বলেন, ‘হিলি বন্দর দিয়ে গত জুনে আমদানির অনুমতি পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। তবে আতপ চাল ও সিদ্ধ চাল আমদানির আলাদা কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই। 

 

About Author

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More