বিশেষ প্রতিনিধি দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় সাবেক স্থানীয় সরকার (এলজিআরডি) মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি দেখিয়ে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত সরাসরি খারিজ করতে চাইলেও জামিন আবেদনকারীর আইনজীবীর আরজিতে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইকোর্টর অন্য বেঞ্চে এ আবেদনটি উপস্থাপনের সুযোগ থাকলেও সেটি করা হবে না। নতুন করে নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করা হবে। সেখানে খারিজ হলে আবার হাইকোর্টে আবেদন করা হবে।দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ২৬ জুন মোহতেশাম হোসেন বাবর, বরকত, রুবেলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ। তদন্ত শেষে গত ৩ মার্চ বরকত, রুবেল, বাবরসহ মোট ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার সাহা। আদালত অভিযোগ আমলে নিলেও এখন পর্যচন্ত মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি।ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।গত ৮ মার্চ রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২৪ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক নজরুল ইসলাম জামিন না দিলে হাইকোর্টে এসে গত ১৬ মে জামিন আবেদন করেন বাবর। পরদিন সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন।রুল শুনানিতে বাবরের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমানকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘এজাহার ও চার্জশিট পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আপনি (আসামি) একজন মন্ত্রীর ভাই। আপনার একটা লিডারশিপ রয়েছে। এলজিইডি থেকে শুরু করে এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে আপনি টেন্ডারবাজি করেননি। ‘
তখন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি (বাবর) মন্ত্রীর ভাই ঠিক আছে। কিন্তু আমি অপ্রপচারের শিকার। মিডিয়ায় আসা রিপোর্ট দিয়ে বিচার করলে হবে না। আমি জামিন পেতে পারি কি না, জামিন পাওয়ার মতো উপযুক্ত কারণ আছে কি না সেটা বিবেচনা করতে হবে।তখন আদালত বলেন, ‘আপনি (বাবর) অপরাধী কি না সেটা তো বিচারে প্রমাণিত হবে। কিন্তু নথিতে প্রাথমিক অপরাধের উপাদান রয়েছে।এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, অর্থপাচার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। এ অপরাধের পেছনে প্রধান হোতা হচ্ছেন খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। তার নেতৃত্বে এ সিন্ডিকেট চলেছে। তখন আদালত বলেন, ‘তিনি অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ও রিং লিডার। অন্য আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন তিনি। পরামর্শদাতা ছিলেন। তার কারণে সরকার ও দেশের মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এ ধরনের আসামিদের জামিন দেব কেন?’জবাবে বাবরের আইনজীবী বলেন, ‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তিনি চাঁদাবাজি করেননি, তার চাঁদাবাজি করার কোনো দরকারই ছিল না। তার শ্বশুর মন্ত্রী ছিলেন। পারিবারিকভাবেই তারা ধনী। ‘ এ পর্যাায়ে আদালত মামলার নথি দেখে বলেন, ‘যার আছে সেই তো করে। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। ‘এই বলে আদালত রুলটি খারিজ করতে চাইলে বাবরের আইনজীবীর অনুরোধে আবেদনটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ দেখিয়ে খারিজ করেন।