সাবেক আওয়ামীলীগের প্রেতাত্মা চিহ্নিত সচিব, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে বিরাজ করছে চরম আতংক
নিজস্ব প্রতিবেদক : “তিনি পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে দীর্ঘদিন একই চেয়ার আঁকড়ে ধরে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিত। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে বড় আওয়ামীলীগার হিসেবে পরিচয় দিতেন, সরাসরি গণভবনে গিয়ে কথা বলতেন সবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। কোন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে তাকে মামলার হুমকি দিতেন। যাতে কোন সাংবাদিক মা সংবাদ প্রচার না করতে পারে তাই একাধিক আইনজীবী নিজ স্বার্থের নিয়োগ দিয়েছেন বলেও এমনটাই ভয় দেখাতেন সাংবাদিকদের। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বয়স ২ মাস অতিবাহিত হলেও তাকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে অপনারণ করা হয়নি শেখ হাসিনার অন্যতম আমলাতান্ত্রিক দোসর তাজুল ইসলামকে।
স্বৈরাচারের এই দোসর বহাল তবিয়তে থাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা অনতি বিলম্বে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ও আওয়ামী সুবিধা ভোগি এই আমলাকে ওএসডি করে তার সময়ের অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।”
সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানই যখন সরাসরি অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তখন সেই প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হওয়া সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান।
কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম একটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন-বিআরটিসি; যেখানে চেয়ারম্যানই খোদ জড়িয়ে পড়েছেন অনিয়ম-দুর্নীতিতে। সংস্থাটির ছোট বড় প্রায় সব খাতের অনিয়ম-দুর্নীতিতেই নিজেকে এমনভাবে জড়িয়েছেন চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, যেন তিনি চেটেপুটে গিলছেন বিআরটিসিকে। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে স্বজনপ্রীতি, পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা থেকে নারীপ্রীতি। হেন কোনো অভিযোগ নেই যার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই। আর এসবের আংশিক ফিরিস্তি তুলে ধরে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগ সূত্রেই জানা যায় তার অনিয়ম-দুর্নীতির এসব তথ্য।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিসিতে বিগত ৩ বছরে অবৈধভাবে প্রায় এক হাজার ২০০ লোককে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। যার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে আট কোটি টাকারও বেশি ঘুষ গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিআরটিসি থেকে তিনি ৫শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রাঁ (শব্দ) হয়নি কোথাও। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সাধারণত মুখও খুলতে চান না অধঃস্তনরা।
এদিকে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে নুসরাত জাহান ও ইসরাত নামে দু’জনের নিয়োগই সংস্থাটিতে বেশ আলোচিত। কারণ তাদের দুজনকেই এ পর্যন্ত একাধিক পদে একাধিকবার নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। তাদের দুজনই প্রথম নিয়োগ পান কন্ট্রাক্টর ডি হিসেবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফের তাদের নিয়োগ দেয়া হয় জব সহকারী হিসেবে। বর্তমানে আবারো তাদের একজনকে সহকারী নেজারত কর্মকর্তা ও আরেকজনকে কল্যাণ কর্মকর্তা পদে তৃতীয় দফায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় দফায় তাদের চাকরি দিতে চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের যে চেষ্টা তার প্রমাণ মিলেছে। গত জুলাই মাসে তাদের দুজনেরই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নুসরাত জাহান ও ইসরাতের সাথে পৃথকভাবে চেয়ারম্যানের রহস্যময় সম্পর্ক রয়েছে। তবে সম্পর্কের গভীরতার বিষয়টি অনেকেই জানলেও সংস্থার অভ্যন্তরীণ চাপে পড়ার ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।
এ ছাড়াও গত বছরের মে মাসে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার পদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও পঞ্চম স্থান প্রাপ্ত হয়েছেন চাকরিপ্রার্থী মো. রাশেদ খান। পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষার সময় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে আটকও হন তিনি। ঘটনা জানাজানি হলে পরিচয় মেলে রাশেদের। তিনি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের ভাগ্নি জামাই। যে কারণে আটকের পর আর তাকে পুলিশে দেননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, বরং তাকে ছেড়েই দেয়া হয়। গত আগস্টে বিআরটিসির নিরাপত্তা সহকারী পদে ফের তার নামে লিখিত পরীক্ষার কার্ড ইস্যু করা হয়।
বিগত ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়সহ সমস্ত ডিপোতে টেন্ডারবিহীন ও টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান তার নিজস্ব লোকবল দিয়েই ডিপোর প্রায় প্রত্যেকটি কাজ করান। উৎকোচের মাধ্যমে মেসার্স আল মালিক ট্রেডার্স, এম এইচ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স অনন্যা ট্রেডার্সকে দিয়েও কাজ করান তিনি। এ ক্ষেত্রে অন্য কারো কাজ পাওয়ার সুযোগ থাকে না। এসব কাজের মাধ্যমে এ যাবৎকালে তিনি ১২ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও তার ছেলে অমির ফাস্ট সিকিউরিটি ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মো. নজরুল ও জামান নামের জনৈক দুই ঠিকাদার ঘুষের অর্থ লেনদেন করেন। বিআরটিসির বাসে ইন্টারনেট স্থাপনের কাজটিও করেন চেয়ারম্যানের ছেলে অমি ও তার বন্ধু। তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারনেট স্থাপনের কাজটি করা হলেও এর কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না যাত্রীরা; বরং প্রতি মাসেই দেশের সমস্ত ডিপো থেকে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অমি ও তার বন্ধু মাসিক প্রায় ১৮ লাখ টাকা বিল গ্রহণ করছেন। এর মাধ্যমে গত দুই বছরে তিন কোটি টাকা হাতিয়েছেন তারা।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের আগের চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার সময় বিআরটিসির ফান্ডে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা রেখে যান। তাও এখন নেমে এসেছে ১৪ কোটি টাকায়। শুধু তাই নয়, গাড়ির লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকেও গত দুই বছরে প্রায় চার কোটি টাকার উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সমস্ত ডিপো ইনচার্জদের কাছ থেকে গাড়ি মেরামত, গাড়ির পার্টস ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমেও প্রায় আট কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।
তার বিরুদ্ধের এসব অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি তার (বিআরটিসির) পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যদিও সার্বিক অভিযোগই তার বিরুদ্ধে, পরিচালক প্রশাসক কীভাবে কথা বলবেন জানালেও তিনি তারপরও তার সঙ্গেই কথা বলতে বলেন। তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, বিআরটিসিতে এসে খবর নিয়ে যান ২০২১ সাল থেকে কী হয়েছে এখানে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, এ নিয়ে দুদক তদন্ত করবে। এ সবকে তিনি ভয় করেন না এবং এসব মোকাবিলার জন্যও তার বুকের পাটা রয়েছে বলেও গণমাধ্যম কে জানান তিনি।
দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহুল আলোচিত চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমান খান । গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক- মহাসড়ক বিভাগ ছাড়াও বিআরটিসির বিভিন্ন দফতরে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আইনী নোটিশে মাহবুবুর রহমান খান উল্লেখ করেন-” চলতি বছরের ৬ জুন বিআরটিসির কনট্রাকটর (গ্রেড-ডি) ও কাউন্টার ম্যান পদে ১৪১ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ অস্থিতিশীল, তখন ১৬ জুলাই উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। এরপর চলতি বছরের ১৮ জুলাই উক্ত পদে ২০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। উক্ত প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকায় প্রক্রিয়াটি বন্ধ থাকে।
গত ৭ আগস্ট রাষ্ট্র যখন সরকারবিহীন এবং সরকারি অফিস আলাদাত বন্ধ, ওই সময় পিও এল অ্যাটেনডেন্ট পদে ১০ জন, ২ জন বুকিং সহকারী ও ২ জন পিও এল সহকারীকে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেন তিনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কার্যত, দেশের সব দাফতরিক কাজ বন্ধ থাকার পরও এহেন পরিস্থিতিতে তিনি নিয়োগ দেন। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় প্রমাণিত হয় যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না এবং উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তদন্ত চেয়ে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী মাহবুবুর।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের একান্ত আস্থাভাজন জামিল হোসেন তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই আস্থাভাজন এবং সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হাফিজুর রহমান লিকুর একান্ত আস্থাভাজন গাবতলী ডিপোর ম্যানেজার থাকাকালীন জামিল হোসেন এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের কূটকৌশলী অপতৎপরতায় বিভিন্ন জনের নামে মিথ্যা মামলা ও বিআরটিসির ১৫/১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাবহার করে মতিঝিল এলাকায় কয়েকজন লোক সহ সাংবাদিককে মারধর করান। ওই ডিপো ম্যানেজার বর্তমান বরিশাল বাস ডিপোর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে ডিপো ম্যানেজার জামিল হোসেন সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হাফিজুর রহমান লিকুর সহযোগিতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির পুলিশ কমিশনার মো: হাবিবুর রহমান কে দিয়ে পল্টন থানায় তদবির করিয়ে একটি পত্রিকা ও অজ্ঞ্যাত নামা আসামি করে একটি মামলা করান।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো : তাজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমের সাথে ক্ষমতা প্রদর্শন, অনিয়ম,দুর্নীতিসহ নানা কারনে কর্মক্ষেত্রে তিনি বহুল আলোচিত-সমালোচিত, তিনি যেন বিআরটিসির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে মুর্তমান আতংকের আরেক নাম।
গত ৫ আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দপ্তরের বিতর্কিত চেয়ারম্যান,মহাপরিচালক কেউ বদলী, নয়তো কেউ ওএসডি হয়েছেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরম আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন।
কাটা দিয়ে কাটা তোলায় পারদর্শী তিনি : চেয়ারম্যান মো : তাজুল ইসলাম কাটা দিয়ে কাটা তোলার ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পূর্বে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াসহ তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ব্যাবহার করেছেন, গত ৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর তাদেরকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিপক্ষ সাজিয়ে তাদেরকেই পতিত সরকারের দোসর বানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়ে নিজেকে বানিয়েছেন ধর্মপূত্র যুধিষ্ঠিট।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো : তাজুল ইসলামের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন : গত বুধবার (১৬ই অক্টোবর) রাজধানীর সড়ক ভবনের সামনে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একাধিক ভুক্তভোগীগন গণমাধ্যমকে জানায় যে, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে ঘুষ দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ একতরফা লুটপাট করে শতশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এই তাজুল ইসলাম। এ সমস্ত দুর্নীতি করাতে বিআরটিসি’র বেশ কিছু সংখ্যক কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাদের দাবি এই এই ধরনের কর্মকর্তা যদি সড়ক পরিবহন ভবনে কর্মরত থাকে তাহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাট হবে।
দেশ এবং জনগণের স্বার্থে তারা এই স্বৈরাচারের দোসর বিআরটিসির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবী জানায়। উক্ত মানববন্ধন শেষে তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এসে সমাবেত হয়। উল্লেখ্য যে, মোঃ তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান হিসেবে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে যোগদান করেন। তিনি একজন অতিরিক্ত সচিব এবং বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১১ ব্যাচের সদস্য। গত ১৬ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা পতিত সরকারের দোসর বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো : তাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় চেয়ারম্যান আতংকিত হয়ে পড়েছেন। তারা তাদের এই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম এর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখবেম । তারা আরও জানান, গতকাল এবং আজ বিআরটিসির চেয়ারম্যান তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অববৈধভাবে অফিস চলাকালীন সময়ে সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসের কাজ না করিয়ে তার বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন সংগ্রাম কে প্রতিহত করতে সারাদেশ থেকে বিআরটিসির ড্রাইভার, কনট্রাকটর , নাইটগার্ড সহ বাইরের অপরিচিত প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক বিআরটিসি ভবনের আশপাশ এলাকায় এবং জাতীয় প্রেসক্লাব এর আশপাশ এলাকায় একপ্রকার পাহারা বসিয়েছেন যেনো বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোনপ্রকার বিক্ষোণ মিছিল বা মানববন্ধন করতে না পারে।
চেয়ারম্যান, বিআরটিসি পদে যোগদানের পূর্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এর অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন মাঠপ্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রচার আছে যে, তিনি পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। সরাসরি গণভবনে গিয়ে কথা বলতেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আওয়ামীলীগের অর্থমন্ত্রী আনিসুল হক সহ আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী ও সাংসদের সঙ্গে তার ছিলো দুর্দান্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বয়স ২ মাস অতিবাহিত হলেও তাকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে অপনারণ করা হয়নি। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা অনতি বিলম্বে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ও আওয়ামী সুবিধা ভোগি এই আমলাকে ওএসডি করে তার সময়ের অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। এ সকল বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো : তাজুল ইসলাম এর বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।