আন্তর্জাতিক ডেস্ক রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর আগেই খারাপ আবহাওয়াসহ নানা কারণে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। সংকটের শুরু তখনই। বিশ্বের অন্যতম খাদ্য রপ্তানিকারক দুই দেশের যুদ্ধ সেই সংকটকে চরম ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই যুদ্ধের জেরে ঠিক কী কী কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এর বিস্তারিত বিবরণ।নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বের মোট গম ও বার্লির এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। সূর্যমুখী তেলের মোট বৈশ্বিক চাহিদার ৭০ শতাংশ মেটায় ওই দুই দেশ। একই সঙ্গে তারা ভুট্টারও বড় সরবরাহকারী। এর পাশাপাশি রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধিক সার রপ্তানিকারক দেশ। অথচ যুদ্ধের জেরে এ দুটি দেশ থেকে এসব খাদ্যপণ্য ও সার বিশ্ববাজারে পৌঁছতে পারছে না।
রাশিয়ার দাবি, তারা নিজেদের পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো রাশিয়ার ব্যাংকিং ও শিপিং খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এ কারণেই রাশিয়া নিজেদের খাদ্যপণ্য ও সার রপ্তানি করতে পারছে না বলে দাবি ক্রেমলিনের। অথচ পশ্চিমা নেতারা বলছেন, খাদ্যপণ্যের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।এদিকে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না কৃষ্ণ সাগরে রুশ অবরোধের কারণে। ওই অবরোধের কারণে কৃষ্ণ সাগর সংলগ্ন ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে শস্য আনতে পারছে না কোনো জাহাজ। মার্কিন কৃষি দপ্তরের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জোসেফ গ্লবার জানান, ইউক্রেন সাধারণত ৬০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর তারা মাত্র ১৫ থেকে ২০ লাখ টন শস্য বিশ্ববাজারে পাঠাতে পেরেছে।শুধু রপ্তানি আটকে গেছে তা নয়, ইউক্রেনে কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি কিয়েভের।
ইউক্রেনের অভিযোগ, রুশ বাহিনী কৃষি অবকাঠামোর ওপর গোলা নিক্ষেপ করছে, ফসলের ক্ষেত জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ফসল চুরি করে নিয়ে গিয়ে বাইরে বিক্রির চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের অভিযোগের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাদের পশ্চিমা মিত্ররা বিভিন্ন প্রমাণ আছে বলে দাবি করছে। এই যেমন, মে মাসের শেষ দিকে ম্যাক্সার টেকনোলজির সংগৃহীত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, রুশ পতাকাবাহী জাহাজ ক্রিমিয়া থেকে শস্য নিয়ে সিরিয়ায় নোঙর করে এবং সেখানে পণ্য খালাস করে।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গমের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ। আর চিনি, মাংস, দুধ ও মাছের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা সংকটাপন্ন দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মন্তব্য করে এপি।