ভারতের বিএসএফের গুলিতে বিনা কারনে মারছে বাংলাদেশের জনগন।

0
বিশেষ প্রতিবেদক                  গত আগষ্টের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এক ছাত্র জনতার শিবির কর্মীরা রিপোর্ট করেছে যে বাংলাদেশের ৯১৪ জন নিহত হয়েছে। আহত ২৪৭৭এর বেশি। অপরদিকে ভারতের বিএসএফের গুলি বিনা কারনে মারছে বাংলাদেশের জনগন। এতে গত বছর ২৮ জন নিহত করেছে ভারত।বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পৃথক দুই স্থানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।বুধবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বেনারকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রোকনপুর সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে সাইফু‌ল ইসলাম (৩০) নিহত হন।এছাড়া, যশোরের বেনাপোল সীমান্তের দৌলতপুর এলাকায় বিএসএফের গুলিতে বাবু মিয়া (২৫) ও ডালিম হোসেন (২৭) আহত হয়েছেন।মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, এ নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গত তিন মাসে সাত বাংলাদেশি প্রাণ হারালেন। আহত হয়েছেন আট জন।বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণহানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আসকের তথ্য অনুসারে, গত বছর বিএসএফের গুলিতে ২৮ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন।ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সাধারণ সম্পাদক কিরীটি রায় বেনারকে বলেন, “সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার যে প্রতিবেদন বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন প্রকাশ করেছে, বিএসএফের হাতে প্রকৃতপক্ষে সীমান্তের দুপারে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।”মাসুমের হিসাবে, গত তিন মাসে মারা গেছেন ১৮ থেকে ২০ জন।কিরীটি রায় আরও বলেন, “বিএসএফ কোনো আইনের শাসন মানে না। কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।”গত কয়েক মাসে মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে বুধবার মাসুমের পক্ষ থেকে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবি জানানো হয়।বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগণায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ডা. কাকলী ঘোষ দস্তিদার নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে বেনারকে বলেন, “ইচ্ছাকৃতভাবে এসব নৃশংস ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। কোনো রকম উসকানি ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব করা হচ্ছে।”মূল কারণ গরু চোরাচালান: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসীমান্ত হত্যার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার বেনারকে বলেন, সীমান্ত এলাকায় প্রাণহানির মূল কারণ দুই দেশের আন্তঃসীমান্ত গরু চোরাচালান।তিনি বলেন, এ ধরনের প্রাণহানি বন্ধে বাংলাদেশ-ভারত একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।“সীমান্তে যে কোনো মানুষের প্রাণহানি দুঃখজনক। তবে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর একটি বড় কারণ হলো অনানুষ্ঠানিক গরু ব‌্যবসা এবং সীমান্ত এলাকার কালো অর্থনীতি। এই ব‌্যবসার সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় অংশের মানুষ জড়িত,” বলেন তিনি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাঁটাতার কেটে ফেলে গরু পারাপার করা হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, যে অংশে তার কাটা পড়ে, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএফ সদস‌্যদের চাকরি চলে যায়। সে কারণে বিএসএফ সদস‌্যরা গুলি চালায়।”বাংলাদেশ ও ভারতের মধ‌্যে সুন্দর-সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কথা হলো, এসব ক্ষেত্রে বিএসএফ সদস্যরা যেন জীবন বিনাশী গুলি ব্যবহার না করে রাবার বুলেট ব্যবহার করে। সে ক্ষেত্রে সীমান্ত এলাকায় হত্যা শূন্যের কোটায় নামবে।”তবে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বিনা উসকানিতেও বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করে।আইন ও সালিশ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ১৭ মার্চ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়পাশা সীমান্ত এলাকায় দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলাদেশি কিশোর সাদ্দাম নিজের দুটি গরু আনতে সীমান্ত এলাকায় যায়। সে সময় সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উনকোটি জেলার মাগুরিউলি জেলার বিএসএফের টহল দল গুলি চালালে সে প্রাণ হারায় এবং আরেক বাংলাদেশি ছিদ্দিক আহত হন।বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সল ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। ভারতের পক্ষ থেকে বারবার এটি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় না।এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মত বিনিময় সভায় সীমান্তে হত‌্যাকাণ্ডের কথা উঠে আসে। সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা বন্ধে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর আহ্বান জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র।বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ‌্যে অন্যতম তিক্ত ইস্যু হলো সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যা। দুই দেশের মধ‌্যে বহু দিন ধরে চলে আসা সীমান্ত বিরোধ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেটানো গেলেও, বন্ধ হয়নি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যা।ভারতের অভিযোগ, বাংলাদেশের অপরাধীরা গরু ও অন্যান্য অবৈধ কাজের জন‌্য ভারতে অনুপ্রবেশ করেন এবং বিএসএফ জওয়ানদের ওপর গুলি চালান। আত্মরক্ষার্থে তাঁরাও গুলি চালান।২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন (১৪) বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। তাঁর লাশ সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকে কয়েকদিন। এই হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ভারত ঘটনাটির তদন্ত করলেও দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায়নি।সীমান্ত বিরোধের জেরে ২০০১ সালের ১৬-১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের পাদুয়া এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে ১৬ ভারতীয় জওয়ান নিহত হন। এরপর বেশ কয়েকজন বিডিআর সদস্যও প্রাণ হারান।কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতবাসের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপরাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বুধবার বেনারকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ‌্যে যে কয়েকটি অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, তার মধ‌্যে অন্যতম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানি।“২০১০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশিদের হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এত বছর পরও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি,” আপেক্ষ করেন তিনি।হুমায়ূন বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, গরু চোরাচালানের কারণে সীমান্তে প্রাণহানি ঘটে। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তবুও গুলি চালিয়ে এভাবে মানুষ হত্যা করা যায় না।”তিনি বলেন, “দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ম‌্যানুয়েল অনুযায়ী, কেউ অবৈধভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে গেলে তাকে আটক করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি না করে লাইভ বুলেট দিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিজিবি-বিএসএফ সভায় বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, লাইভ বুলেটের পরিবর্তে রাবার বুলেট ব্যবহার করা হবে কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়িত হয়নি।”

- Advertisement -

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.