আন্তর্জাতিক ডেস্ক পূর্ব ভারতের পাহাড় ও বনে ঘেরা আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে অতিবৃষ্টিজনিত দুর্যোগ অব্যাহত রয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসে সেখানে গত দুই দিনে আরো অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।টানা বৃষ্টিতে বহু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুই রাজ্যের অনেক অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও গৌরাঙ্গ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সেসব এলাকার মানুষকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।মেঘালয়ের বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জি ও মওসিনরামে ১৯৪০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।বন্যায় আসামের ২৮টি জেলার ১৯ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় এক লাখ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আসামে বন্যা ও ভূমিধসে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।আসামে প্রায় তিন হাজার গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ৪৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি বাঁধ, কালভার্ট ও সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষকে বহন করা একটি নৌকা হোজাই জেলায় ডুবে গেছে। এ সময় ২১ জনকে উদ্ধার করা গেলেও তিন শিশু নিখোঁজ রয়েছে।আসামের রাজধানী গুয়াহাটির বেশির ভাগ স্থানে পানি উঠে থমকে আছে জনজীবন। শহরে বেশ কয়েকটি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।গুয়াহাটি ও শিলচরে বন্যা ও ভূমিধসে আটকে পড়া মানুষের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে আসাম সরকার। অন্যদিকে প্রতিবেশী অরুণাচল প্রদেশে পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন একটি বাঁধ নদীর পানিতে ডুবে গেছে।মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বন্যায় মৃতদের পরিবারের জন্য চার লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মেঘালয় রাজ্য সরকার চারটি কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়ও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার মাত্র ছয় ঘণ্টায় শহরে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। গত ৬০ বছরের মধ্যে আগরতলায় তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বন্যার কারণে শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এর জেরে ধূপগুড়ি এবং ফালাকাটার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে তিস্তা, জলঢাকা, কুমলাইসহ বিভিন্ন নদীর পানি বাড়ায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এমনিতেই অতিবৃষ্টিপ্রবণ। এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে এবং তা ধ্বংসাত্মক আকার ধারণ করছে।