বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিবিসির ২০২৪ সালের ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন এক বাংলাদেশি। তার নাম রিক্তা আক্তার বানু। ২০২৪ সালের জন্য বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকাটি আজ বুধবার প্রকাশ করেছে বিবিসি।এই তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জাগানো ও প্রভাবশালী নারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নাদিয়া মুরাদ, ধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়া ও ক্যাম্পেইনার জিসেল পেলিকট, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিয়ান রেবেকা আন্দ্রাদে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, গায়িকা রে, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ট্রেসি এমেন, জলবায়ু ক্যাম্পেইনার আদেনিকে ওলাদোসু এবং লেখিকা ক্রিস্টিনা রিভেরা গার্যা।পাঁচটি বিভাগে (ক্যাটাগরি) ১০০ জন নারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিভাগগুলো হলো জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি।বাংলাদেশের রিক্তা আক্তার বানু পরিচয়ে বলা হয়েছে, নার্স ও স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।রিকতা আখতার বানু সম্পর্কে বিবিসি বলেছে, তিনি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন। সেখানে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুকে অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়।রিক্তা আক্তার বানুর মেয়ে অটিস্টিক। মেয়েটি সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। রিকতা আখতার বানু তার এই মেয়েকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে রিকতা আখতার বানু তার জমি বিক্রি করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।রিক্তা আক্তার বানুর লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি স্কুলে এখন ৩০০ শিক্ষার্থী আছে। স্কুলটি প্রতিবন্ধিতার বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন স্কুলটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুশিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে থাকে।১০০ নারীর তালিকা কী?প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১০০ জন প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর নাম ঘোষণা করে বিবিসি। তারা ডকুমেন্টারি, ফিচার, সংবাদ প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার তৈরি করে। নারীদের কেন্দ্রে রেখে গল্পগুলো তুলে ধরে, যা বিবিসির সব প্ল্যাটফরমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।কিভাবে নির্বাচিত হয়?বিবিসি ১০০ উইমেন টিম একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে, যা গবেষণার মাধ্যমে এবং বিবিসির ৪১টি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ল্যাংগুয়েজ টিম ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়। তারা এমন প্রার্থীদের খুঁজে থাকে, যারা গত ১২ মাসে খবরের শিরোনামে এসেছেন বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রভাব রেখেছেন।পাশাপাশি যাদের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প রয়েছে বা যারা উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করেছেন এবং তাদের সমাজে এমনভাবে প্রভাব রেখেছেন, যা হয়তো খবর হিসেবে আসেনি।এ বছর রেজিলিয়েন্স বা ‘দৃঢ়তা’র থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। রেজিলিয়েন্স বলতে মূলত সংকটের মুখে লড়াই করার সক্ষমতা ও সহনশীলতাকে বোঝানো হয়। বিবিসি বিশ্বজুড়ে নারীদের ওপর এই বছরের প্রভাবকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছে এবং এমন নারীদের নির্বাচন করেছে, যারা তাদের দৃঢ়তার মাধ্যমে পরিবর্তন আনছেন এবং স্থানীয় বা বৈশ্বিক পর্যায়ে জীবনমান উন্নত করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজ করছেন, এমন নারীদের নামও যাচাই করা হয়েছে, যার মধ্যে জলবায়ু বিষয়ে অগ্রদূত ও অন্যান্য পরিবেশগত নেতাদের একটি দল নির্বাচন করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজের সব অংশ ও রাজনৈতিক মতামতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এমন নামগুলো খোঁজা হয়েছে, যেগুলো ভিন্ন ধারার মতামত তৈরি করে। অঞ্চলভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে চূড়ান্ত নামগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। তালিকায় থাকা সব নারীর সম্মতি নেওয়া হয়েছে।