নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছিলেন দলটির প্রভাবশালী এমপি। ক্ষমতার গরমে দিনকে রাত বানাতে পারতেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে শাস্তি ভোগ করতে হতো। একই কায়দায় অপরাধ না করেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছিল বরগুনার অতিরিক্ত এসপি মহররম আলীকে।
- Advertisement -
অন্যদিকে বিভাগীয় মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন প্রতিবাদী সেই পুলিশ কর্মকর্তা মহররম আলী। তাঁকে দায়মুক্তি দিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট বরগুনায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা ছাত্রলীগের শোক মিছিল বের করা হয়।
মিছিলে আরেকটি পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে এই ঘটনার সময় ইটপাটকেলে পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এ সময় পুলিশ ছাত্রলীগের ওই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে লাঠিপেটা করে। তখন সেখানে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং কর্তব্যরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট রাতেই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশের উদ্দেশ্যই ছিল মারপিট করা। এ সময় তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে প্রত্যাহার এবং তাঁর বিচারের দাবিও জানান। পরদিন ১৬ আগস্ট রাতে মহররম আলীসহ দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবিতে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। সেখানেও সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু একই দাবি তোলেন। অথচ সে সময় জেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটির সভাপতি রেজাউল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমানসহ পুলিশ যাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করেছে, সেটা না করলে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটত। এ জন্য জেলা পুলিশকে ধন্যবাদও জানান তাঁরা।
মহররম আলী ছাড়াও ওই সময় প্রত্যাহার করা হয় বরগুনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সাগর, পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল রাফিউল ইসলাম, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল কে এম সানিকে। এ ছাড়া ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এএসআই) ইসমাইল হোসেন এবং কনস্টেবল রুহুল আমিনকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
আলোচিত শম্ভুর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চারবারের সাবেক এমপি শম্ভুর বিরুদ্ধে জমি জবরদখল করে নিজের কারখানা স্থাপন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলা, অর্থপাচারের অভিযোগ আছে। অন্যদিকে বরগুনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডিসহ ঠিকাদারি দপ্তরে টেন্ডারবাজির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। জেলার বিভিন্ন কাজে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি আর অপরাজনীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
জানা গেছে, বরগুনার মানুষ তাঁকে ডাকে ‘দাদা’ নামে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছিলেন বরগুনার মুকুটহীন সম্রাট। বছরের পর বছর ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী এই নেতা এবং তাঁর পরিবারের ইশারায় আবর্তিত হয়েছে বরগুনার উন্নয়ন প্রকল্প ও রাজনীতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন প্রকল্প—সবখানে শম্ভু পরিবার কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব। পরিবারটির বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ।
বিগত দিনে তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি কেউ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। গত এক মাসেও খোঁজ মেলেনি দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পাঁচবারের সংসদ সদস্য এমপি শম্ভুর।
শম্ভু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ৫০০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।