কামাল হোসেন: প্রযুক্তি খাতে নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ যেন কিছুতেই কমছে না। ওয়েব সামিটের পঞ্চম গ্লোবাল নারী প্রযুক্তি রিপোর্টে উঠে এসেছে যে নারীরা এখনও তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় বেতন, সুযোগ এবং অর্থায়নে পিছিয়ে রয়েছেন। বেতন বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য এবং পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে চাপের মধ্যে পড়ছেন নারীরা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১,০০০ এর বেশি নারীর মধ্যে ২৯.৬ শতাংশ নারী তাদের ব্যবসা শুরু করতে অর্থায়নের অভাবকে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নারী-প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপগুলো এখনও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংগ্রহে জটিলতা সম্মুখীন হচ্ছে, যা এই বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে।
কিন্তু এর চেয়েও গভীর সমস্যা হলো নেতৃত্বে নারীদের অভাব। ৫১ শতাংশের বেশি নারী মনে করেন যে, তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় তারা ন্যায্যভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন না। তবে আরও যেটা চোখে পড়ার মতো তা হলো, ৪৯.১ শতাংশ নারী পরিবার এবং ক্যারিয়ারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে চাপে পড়েন, যা গত বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। ক্যারোলিন কুইনলান, ওয়েব সামিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট, এই পরিস্থিতিকে “একই পুরোনো গল্প” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
“একই গল্প বারবার ফিরে আসে,” বলেন কুইনলান। “লিঙ্গবৈষম্য, কম বেতন, ইমপোস্টার সিনড্রোম—এগুলো যেন কখনোই পাল্টায় না। আমাদের হয়তো এগোনোর ইচ্ছা আছে, কিন্তু প্রতিদিনের বাস্তবতা ঠিক তেমনই রয়ে গেছে।”
নারী রোল মডেলের অভাব আর কাজের জায়গায় অসহযোগিতা নারী কর্মীদের জন্য আরও বেশি হতাশাজনক। ৭৫ শতাংশের বেশি নারী স্বীকার করেছেন যে, পুরুষদের তুলনায় তাদের নিজেকে প্রমাণ করতে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়। আর এই পরিশ্রমের মাঝেও sexism-এর ছায়া যেন ছাড়ছে না। কেউ কেউ বলছেন, তারা বৈঠকে নিজেদের মত প্রকাশ করতে গেলেই পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা উপেক্ষিত হচ্ছেন, কেউ কেউ বলছেন, তাদের ওপরে থাকা পুরুষরা প্রায়ই তাদের পরিবর্তে কথা বলেন।
নারীরা যখন নিজেদের নেতৃত্বের অবস্থানে আনার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তখন তাদের পথের প্রতিটি ধাপে বৈষম্য ও অবজ্ঞার প্রাচীরটি অটল রয়ে গেছে। ৮০ শতাংশ নারী জানিয়েছেন যে, তারা এমন সংস্থায় কাজ করছেন যেখানে একজন নারী ঊর্ধ্বতন ম্যানেজমেন্টে রয়েছেন, তবে সেই সংখ্যা কি আসলেই যথেষ্ট?
- পরিবর্তনের পথে হতাশা আর আশার মিশ্রণ
ওয়েব সামিটের নারী প্রযুক্তি প্রোগ্রাম, যেটি ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল, সেই প্রোগ্রামটি লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারত, কিন্তু প্রায় অর্ধেক নারীই মনে করেন যে এই খাতে এখনও পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট কাজ হচ্ছে না। ৬৯ শতাংশ নারী বলেছেন যে তাদের সরকারও এই ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবুও, ৭৬ শতাংশ নারী আত্মবিশ্বাসী যে তারা নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। তারা দেখছেন কিভাবে ধীরে ধীরে আরও বেশি নারী এগিয়ে আসছেন, স্টার্টআপ নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এই বছর ওয়েব সামিটে অংশগ্রহণকারী ৩,০০০ স্টার্টআপের মধ্যে ১,০০০টি নারী-প্রতিষ্ঠিত। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা, কিন্তু যখন সামগ্রিক প্রযুক্তি খাতের কথা আসে, নারীদের অবস্থান এখনও হুমকির মুখে।
এই বৈষম্য কেবল প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বব্যাপী তথ্য অনুযায়ী, বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব এখনও ৩০ শতাংশের নিচে। নারীরা শুধুমাত্র অর্থায়নে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন না, বরং তাদের প্রতিনিয়ত নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হচ্ছে—দ্বিগুণ পরিশ্রম করে, নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বাধা পেতে হচ্ছে।
- কথোপকথন থামছে না, কিন্তু বাস্তবতা কি বদলাচ্ছে?
ওয়েব সামিটের এই প্রতিবেদন নারীদের প্রযুক্তি খাতের চ্যালেঞ্জগুলির একটি স্পষ্ট প্রতিফলন। যদিও অনেকেই নেতৃত্বের পদে আসতে আগ্রহী, সেই পথটি এখনও বন্ধুর।