আন্তর্জাতিক ডেস্ক ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে ইউক্রেনীয়দের বের হওয়ার মাত্র একটি পথ বাকি, আর সেটি হলো একটি সেতু। রুশ বাহিনী এই সেতু ধ্বংস করে ফেললে গোটা শহর বাকি ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, এমনটা জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর সেরগি গাইদে।সর্বশেষ সিভেরস্কি দোনেৎস্ক নদীর ওপর নির্মিত আরেকটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। এ নিয়ে এই শহরের সঙ্গে যুক্ত তিনটি সেতুর দুটিই ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরুতেই দেশটির রাজধানী কিয়েভ দখলে মনোযোগ দেয় রাশিয়া। তাতে ব্যর্থ হয়ে রুশ বাহিনী লক্ষ্য সরিয়ে আনে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল দখলে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে দনবাস হিসেবে পরিচিত অঞ্চলের বৃহত্তম শহর সেভেরোদোনেৎস্কে চলছে তীব্র লড়াই। শহরটির বেশির ভাগই এখন রুশ বাহিনীর দখলে। শহরের পরিস্থিতি তুলে ধরে লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর জানান, শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সর্বশেষ একটি সেতুই ভরসা।তিনি বলেন, গোলাবর্ষণের ফলে যদি এই সেতুটিও ধসে যায়, তাহলে প্রকৃত অর্থেই শহরটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। গাড়িতে করে সেভেরোদোনেৎস্ক ছাড়ার আর কোনো পথ থাকবে না। গভর্নর জানান, লিসিচানস্ক শহরেও গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। এতে ছয় বছর বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি সেভেরোদোনেৎস্কর পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতি মিটার ভূখণ্ডের’ জন্য ভয়াবহ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর দেশের যোদ্ধারা। জেলেনস্কির ভাষায়, ‘দখলদারদের মূল কৌশলগত লক্ষ্য পরিবর্তন হয়নি। তারা সেভেরোদোনেৎস্কে অবস্থান জোরদার করে যাচ্ছে। ভয়াবহ লড়াই চলছে, বলতে গেলে প্রতি মিটার ভূখণ্ডের জন্য।জাতির উদ্দেশে দেওয়া নিয়মিত ভাষণের অংশ হিসেবে গত রবিবার রাতে তিনি আরো দাবি করেন, দনবাসে রিজার্ভ সেনাদের বিপুল সংখ্যায় জড়ো করার চষ্টো করছে রাশিয়া।গভর্নর গাইদে বলেন, রবিবারও সেভেরোদোনেৎস্কের রাস্তায় রাস্তায় লড়াই হয় ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর। রুশ বাহিনী শহরের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে শিল্পাঞ্চলে এখনো নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। সেখানে কয়েক শ বেসামরিক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। এই কর্মকর্তা বলেন, সেভেরোদোনেৎস্কের আজত রাসায়নিক কারখানার ভূগর্ভস্থ অংশে প্রায় ৫০০ বেসামরিক নাগরিক অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে ৪০টি শিশু।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অ্যামনেস্টির : ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে হামলায় রুশ বাহিনী নিষিদ্ধ গুচ্ছবোমা ব্যবহার করেছে। এতে শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, খারকিভ ও এর আশপাশের এলাকায় রুশ বাহিনী একের পর এক নির্বিচারে বোমা হামলা করেছে। এতে শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।প্রতিবেদনে বলা হয়, গুচ্ছবোমার সঙ্গে সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত রকেট ও কামানের গোলাও ব্যবহার করছে রুশ বাহিনী। সব ক্ষেত্রেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।