বিশেষ প্রতিনিধি মামলার আসামি হলে বিদেশ যাওয়ার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (অপরাধে সংশ্লিষ্ট না থাকার সনদ) মেলে না। কিন্তু ভুয়া ঠিকানা, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র, জাল সিলমহর ও পাসপোর্টের তথ্য জালিয়াতি করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি চক্র বিদেশে যেতে আগ্রহী মামলার আসামিদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে চক্রটি ভুয়া নথিপত্র দিয়ে আবেদন করলেও পুলিশের যাচাইয়ে তা ধরাও পড়ছে।এমনই একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ফার্মগেট, খিলক্ষেত ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে মাসুদ মিয়া, কামাল হোসেন ও গোলাম কিবরিয়া নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ছয়টি ভুয়া আবেদন পল্টন থানা প্রত্যাখ্যান (রিজেক্ট) করে। মূলত একাধিক মামলার আসামিরা চক্রের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ওই আবেদন করে। আবেদনের সূত্রে তদন্ত করে পুলিশ তাদের শনাক্ত করেছে।বুধবার পল্টন মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি জনবান্ধব নাগরিক সেবা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। নাগরিকদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সেবাটি প্রয়োজন হয়। অনলাইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সেবাটি অত্যন্ত সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। নাগরিক এ সেবাটি ডিএমপি অত্যন্ত সুনাম ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রদান করছে।
অভিযানের ব্যাপারে তিনি বলেন, গত ২০ এপ্রিল মাসুদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি পুলিশ কমিশনার বরাবর অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করেন। যা যাচাইকালে আবেদনে উল্লেখিত ঠিকানা ভুয়া পরিলক্ষিত হয়। তখন আবেদনে সংযুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্রটি যাচাই করা হয়। স্বাক্ষর ও প্রত্যয়নপত্রটি সঠিক নয় মর্মে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে ফার্মগেট থেকে আবেদনকারী মাসুদ মিয়াকে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খিলক্ষেত থেকে কামাল হোসেন ও কেরানীগঞ্জ থেকে গোলাম কিবরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।আব্দুল আহাদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ মিয়া বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য ৩০ হাজার টাকায় কামাল হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করেন। কারণ তার নামে নরসিংদীর মাধবদী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কামাল হোসেন আবার ২৮ হাজার টাকায় গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন। অভিযুক্তরা যোগসাজশ করে মূল পাসপোর্টের তথ্য পাতা স্ক্যান করে। এরপর কম্পিউটারের মাধ্যমে জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে পল্টন মডেল থানা এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে। এডিট করা পাসপোর্টের ফটোকপিতে সত্যায়নকারী ডাক্তারের জাল সিলমোহর ও জাল স্বাক্ষর সত্যায়ন করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করে। গ্রেপ্তার ও পলাতকদের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।উপকমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের সদস্য। কিছুদিন আগেও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ছয়টি ভুয়া আবেদন পল্টন থানা থেকে প্রত্যাখ্যাত (রিজেক্ট) হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ডিএমপির প্রতিটি বিভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে অত্যন্ত দ্রুত ও স্বল্প সময়ে নাগরিকদের এ সেবাটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ব্যাংকে ৫০০ টাকা জমা দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না।