বিশেষ প্রতিবেদকঃ বরিশালের পিরোজপুরের শিয়ালকাঠি নিবাসী রহিম নামে একজন মানুষ ছিলেন। তিনি সম্পদক গবেষক,রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক মনীষ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ” ৭৬জামাতে ইসলামীর সাবেক আমীর, সেক্রেটারি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠাতা চিন্তাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) একজন ক্ষণজন্মা মহা মনীষী। পিরোজপুরের শিয়ালকাঠিতে ২ রা মার্চ জন্ম হয় ১৯১৮ সালে।বাংলাদেশে যে কয়জন প্রাতঃস্মরণীয় ইসলামী ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটে তাদের শীর্ষে ছিলেন মওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম।বরিশালের পিরোজপুরের মনীষী।১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।এছাড়াও ১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলন ও একই বছর করাচিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশিয় ইসলামী মহাসম্মেলনে ছিলেন বাংলাদেশর প্রতিনিধি।১৯৮০ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত আন্তঃপার্লামেন্টারি সম্মেলন এবং ১৯৮২ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত শীআদের ইসলামী বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিক উৎসবেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।তিনি এত আত্মপ্রচার বিমুখ ছিলেন যে তিনি নামের আগে মওলানা উপাধিটা ব্যবহারেও কুণ্ঠা বোধ করতেন।অথচ মওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীমের হাদিছ চর্চা তথা ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে আধুনিক শিক্ষার সাথে ইসলামী শিক্ষার বাংলাভাষায় রচিত কোনো কোনো গ্রন্থ পড়ে বুঝবেন এমন যোগ্যতাহীনরাও নামের আগে দেদারসে আল্লামা উপাধি ব্যবহারে এতটুকু কুণ্ঠা বোধ করেন না। তিনি ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত আলিম, বিজ্ঞ ফকীহ, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুলেখক, বাগ্মী সুসাহিত্যিক, অন্যদিকে পার্লামেন্টারিয়ান, রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ।শুধু মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তির মাঝে এতগুলো জ্ঞানের সমাহার সত্যিই এক আশ্চার্যের বিষয়। তিনি শুধু পিরোজপুরের আলিম ছিলেন না, ভারতীয় উপমহাদেশের সমকালীন যুগে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।মাওলানা আবদুর রহীম পিরোজপুরের শিয়ালকাঠিতে ১৯১৮ সালের ২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব খবির উদ্দীন। নিজ এলাকায় প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তৃষ্ণিত অন্তরকে তৃপ্ত করতে তিনি কলিকাতায় চলে যান। ১৯৪২ সনে তিনি এ মাদরাসা হতে কৃতিত্বের সাথে মমতাজুল মুহাদ্দেসীন ডিগ্রী লাভ করেন।স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি বরিশালের নাজিরপুর ও কেউন্দিয়া কাউখালী মাদ্রাসায় প্রধান মাওলানা হিসেবে চার বছর শিক্ষাদানে ব্যাপৃত থাকেন। কিন্তু বাঁধাধরা চাকরি তার পছন্দ হয় নি বলে তিনি আর চাকরি করেননি।বাংলাদেশের আলিমদের মাঝে যে বিষয়টির অভাব পরিলক্ষিত হয়ে আসছিল তাহলো তাদের লিখিত কোনো অবদান তেমন একটা নেই। এ বিষয়টিই হয়তো তিনি উপলব্ধি করেছিলেন এবং কলিকাতায় অধ্যয়নকালেই গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। তার ক্ষুদ্রতর জীবনের শতাধিক গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা তার এ গবেষণারই বাস্তব ফসল।তিনি ছিলেন একজন ইসলামী অর্থনীতিবিদ। বস্তুতপক্ষে তার আগে কোনো আলেম দ্বীন ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনকে বাংলা ভাষায় এত ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে পারেননি। ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে তাদের বাস্তব কোনো ধারণাই ছিল না। বরং অনেকেই একে পার্থিব চিন্তা বা জড়বাদী দর্শন বলে উপেক্ষা করেছেন।তিনি বাংলা ভাষায় সুদের কুফল ও যাকাতের অর্থনৈতিক তাৎপর্য, পুঁজিবাদ ও সমাজবাদী অর্থনীতির মোকাবেলায় ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবহারের শ্রেষ্ঠত্ব যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রমাণ করে আধুনিক শিক্ষার শিক্ষিতের এক বিরাট অংশকে ইসলামী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন-অনুপ্রাণিত করেছেন। শুধু তাই নয় এ সম্পর্কে তিনি বেশ কয়েকটা বইও রচনা করেন। ইসলামী অর্থনীতির উপর তাঁর আরবীতে রচিত আল-ইকতিসাদ আল-ইসলামী পুস্তিকাটি তাঁর ইসলামী অর্থনীতি ও আরবী বিষয়ে পাণ্ডিত্যর বড় প্রমাণ।তিনি ছিলেন একজন বাগ্মী সুবক্তা। তার ভাষা ছিল যেমনি সুন্দর তেমনি আকর্ষণীয়। সাধারণ জনসভার চেয়ে সুধী সমাবেশে, সেমিনার সিম্পোজিয়ামে তাঁর বক্তৃতায় আকর্ষণ বেশি ছিল। তার বক্তৃতা বিষয়বস্তু ভিত্তিক, সুসংহত এবং আকর্ষণীয় ছিল। আধুনিক ও প্রাচীন ভ্রান্ত ধারণাগুলোর মোকাবেলায় ইসলামী জীবন দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব যুক্তি ও ধারাবাহিকতার মাধ্যমে এমনভাবে তুলে ধরতেন যেকোনো সমালোচক তার সমালোচনা করতে পারত না।তার খ্যাতি শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক মহান ব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে তিনি এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তিনি ‘রাবেতা আলমে ইসলামী’ এবং ওআইসির ফেকাহ কমিটির সদস্য ছিলেন।১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত “বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন” এবং রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলনে যোগদান করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামী সেমিনারে যোগদানের জন্য তিনি নেপাল, থাইল্যান্ড, ভারত, আরব আমিরাত, ইরান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ সফর করেন।তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, ছাত্র জীবনেই তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। নিম্নের পত্রিকাগুলোতে তিনি লিখতেন এবং সম্পদনা করতেন ।১৯৪৯-৫০ সালে বরিশালে তানজিন সম্পাদনা; ১৯৫৯-৬০ সালে দৈনিক নাজাতের জেনারেল ম্যানেজার; সাপ্তাহিক জাহানে নও’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । ১৯৪৫ সাল থেকে যে সকল পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন : সাপ্তাহিক নকিব, মাসিক মোহাম্মদী (কলিকাতা ও ঢাকা) মাসিক হেদায়েত, মাসিক সুন্নাত আল জামাত, ইসলামী একাডেমী পত্রিকা, ইসলামী ফাউন্ডেশন পত্রিকা, মাসিক পৃথিবী, দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, ঢাকা ডাইজেষ্ট, মাসিক মদীনা, মাসিক তাহজীব, ত্রৈমাসিক কলম, সাপ্তাহিক মিজান (কলিকাতা), মাসিক মঞ্জিল, দৈনিক পূর্বদেশ, মাসিক কুরানুল হুদা (করাচী), মাসিক চেরাগে রাহ (করাচী), সন্ধান (ইসলামাবাদ), সাপ্তাহিক নাজাত, দৈনিক সংগ্রাম, মাসিক তাওহীদ প্রভৃতি। এককথায় তিনি ছিলেন ইসলামী সাহিত্যাঙ্গনে এক জ্ঞানবান স্রোতধারা।তিনি ছিলেন উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনের সওগত। ১৯৪৫ সালে মাওলানা মওদুদীর বিপ্লবী পুস্তকসমূহের সাথে পরিচিত হবার পর জামায়াতে ইসলামী হিন্দে যোগদান করেন। ১৯৪৬ সালে মাতৃভূমিতে ফিরে এসে ইসলামী সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। সাথে সাথে উর্দু থেকে অনুবাদ চলতে থাকে। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সমানে তা ছাপা হতে থাকে। পাকিস্তান হবার পর ঢাকাকে কেন্দ্র করে ইসলামী আন্দোলনের কাজে মনোযোগী হন। কিছুকালের ব্যবধানে এখানে সাংগঠনিক ভিত্তি স্থাপিত হয়।তিনি জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী হিসেবে ১৯৫১-৫৫ সাল, ১৯৫৬-৬৮ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর, ১৯৬৮-৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ের মধ্যে ১৯৪৮-৪৯ পাকিস্তানের আদর্শ প্রস্তাব, ১৯৫১-৫৬ ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা, ১৯৬০-৬২ সালে আইয়ূব সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামী নীতিমালা প্রতিষ্ঠার জন্য ৬৪ জন জামায়াত নেতাসহ তিনি কারাবরণ করেন। জামায়াতকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।১৯৭১-এর শেষ হতে ১৯৭৪ পর্যন্ত নেপালের কাঠমুন্ডুতে অবস্থান করে এ উপমহাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারে বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন।দেশের সকল ইসলামী দল ও শক্তিকে একটিমাত্র দলে পরিণত করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করে তিনি তার সহ-সভাপতি হন। পরের বছর তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচন হন।১৯৭৯ সালে তিনিসহ ছয়জন দল থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন গঠন করেন। তিনি সর্বদাই ইসলামী আন্দোলনকামীদের জোট সৃষ্টির মাধ্যমে গণ-আন্দোলন বিশ্বাস করতেন বলে দেশের প্রখ্যাত ওলামায়েকেরাম, পীর মাশায়েখ ও বুদ্ধিজীবী সমন্বয়ে ‘সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ’ ‘খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। ১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’ আত্মপ্রকাশ করে।তার কয়েক মাসের মধ্যে দেশের সর্বত্র ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এক ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ আন্দোলনের প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতেন। এজন্য পুলিশের নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানীর সম্মুখীন হয়েও তা তিনি হাসিমুখে বরণ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অটল থাকেন।আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে তিনি ছিলেন পণ্ডিত ও মহাজ্ঞানী। ইসলামী জীবন দর্শনের উপর মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে তিনি তার দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, পুঁজিবাদ ও সমাজবাদ, কমিউনিজম ও সোসালিজম, সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সৃষ্টিতত্ত্ব ও বিবর্তনবাদ, আসমান জমিনের সৃষ্টি রহস্য প্রভৃতি মৌলিক বিষয়ে তত্ত্ববহুল বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে মহাসত্যের সন্ধানে, বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব কমিউনিজম ও ইসলাম, ইসলামের দৃষ্টিতে বিজ্ঞান, পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলামী সমাজ, পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সাধারণ একজন আলেম হয়ে আধুনিক এত জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্যিই আশ্চার্যের বিষয়।তিনি ছিলেন সাংবাদিক জগতের নির্ভীক সৈনিক। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তার পদচারনা ছিল। এ সময়ে তিনি মাসিক মোহাম্মদী ও আজাদ পত্রিকায় জ্ঞান-গর্ভ দিয়ে সাংবাদিকতার জগতে পদার্পণ করেন।পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে তিনি সাপ্তাহিক “তানজিম পত্রিকায়” সম্পাদকের কাজ করেন এবং এ দশকের শেষের দিকে ‘দৈনিক নাজাত’ পত্রিকার জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে এবং সাপ্তাহিক জাহানওসহ আরো অনেক বহুল প্রচারিত ইসলামী পত্রিকার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।আবদুর রহীম ছিলেন স্বার্থক গবেষক । তিনি গতানুগতিকভাবে শুধু পড়েই তার দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি প্রতিটি বিষয়ের উপর চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করেছেন। কুরআন সুন্নাহ তথা ইসলামী জীবন দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করেছেন। তিনি আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসার বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যার আলোকে ইসলামী সমাধান দিয়েছেন এবং যেকোনো মতবাদ বা মতাদর্শের উপর ইসলামী জীবন ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে কুন্ঠাবোধ করেননি।তিনি ছিলেন আদর্শবাদী সুলেখক। তিনি যা পড়েছেন, গবেষণা করেছেন, তা তার ক্ষুরধার মসিতে প্রকাশ করতে সদা ছিলেন সচেষ্ট। সে যে কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন, আমৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত তা আর থামেনি। ১৯৪৩-১৯৮৭ এ দীর্ঘ সময়ে তিনি বিরামহীনভাবে লিখেছেন। বর্তশান যুগের আলেমদের কেউই তার লেখার সমকক্ষতা অর্জন করতে পরেনি।তিনি ছিলেন সুসাহিত্যিক পণ্ডিত। তার লেখায় যেমন ছিল জোর আর ভাষা ছিল তেমনি সহজসরল। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জ্ঞান ভান্ডারে মাওলানা আব্দুর রহীম তার প্রতিভার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া বিশাল ইসলামী সাহিত্য ভান্ডারে শতাধিক মৌলিক ও অনুদিত গ্রন্থ শোভা বর্ধন করছে।নিরহংকার ও নির্লোভ ব্যক্তিত্ব হসেবে তার নাম সর্বাগ্রে। ১৯৭৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গবেষণা কর্ম পুরস্কার; ১৯৮৩ সালে অনুবাদের জন্য পুরস্কার প্রদান করে।মাওলানা আব্দুর রহীম শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি জীবন্ত প্রতিষ্ঠান। তিনি জীবদ্দশায় যে বিশাল ইসলামী সাহিত্য রচনা করে গেছেন তার ফিরিস্তি নিচে প্রদান করা হলো।প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থ : ১. কালেমায়ে তাইয়্যেবা (প্রকাশিত ১৯৫০) ২. ইসলামী রাজনীতির ভুমিকা (প্রকাশিত ১৯৫২) ৩. ইমাম ইবনে তাইমিয়া (প্রকাশিত ১৯৫৩) ৪. কমিউনিজম ও ইসলাম (প্রকাশিত ১৯৫৪) ৫. ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার (প্রকাশিত ১৯৫৪) ৬. ইসলামের অর্থনীতি (প্রকাশিত ১৯৫৬) ৭. সমাজতন্ত্র ও ইসলাম (প্রকাশিত ১৯৬২) ৮. সূরা ফাতিহার তাফসীর (প্রকাশিত ১৯৬৩) ৯. পাক-চীন বন্ধুত্বের স্বরূপ (প্রকাশিত ১৯৬৬) ১০. তওহীদের তত্বকথা (প্রকাশিত ১৯৬৭)১১.সুন্নাত ও বিদআত (প্রকাশিত ১৯৬৭) ১২. হাদীস শরীফ ১ম খন্ড ও ২য় খন্ড (প্রকাশিত ১৯৬০)১৩.হাদীস সংকলনের ইতিহাস (প্রকাশিত ১৯৬৯) ১৪. ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা (প্রকাশিত ১৯৬০) ১৫. পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলামী সমাজ (প্রকাশিত ১৯৬৯) ১৬. অর্থনৈতিক সুবিচার ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ) (প্রকাশিত ১৯৭৭) ১৭. হযরত মুহম্মদের অর্থনৈতিক আদর্শ (প্রকাশিত ১৯৭০)১৮. খিলাফতে রাশেদা (প্রকাশিত ১৯৭৪) ১৯. হাদীস শরীফ ২য় খন্ড ও ৩য় খন্ড (প্রকাশিত ১৯৭৫) ২০. মহাসত্যের সন্ধানে (প্রকাশিত ১৯৭৭) ২১. সূদ মুক্ত অর্থনীতি (প্রকাশিত ) ২২. নারী (প্রকাশিত ১৯৭৮) ২৩. ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়ন (প্রকাশিত ১৯৭৯) ২৪. ইসলামের দৃষ্টিতে বিজ্ঞান (প্রকাশিত ১৯৭৯) ২৫. খোদাকে অশ্বীকার করা হচ্ছে কেন? (প্রকাশিত ১৯৮০)২৬.আজকের চিন্তাধারা (প্রকাশিত ১৯৮০) ২৭. আল-কোরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ (প্রকাশিত ১৯৮০) ২৮. অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম (প্রকাশিত ১৯৬৬) ২৯. চরিত্র গঠনে ইসলাম (প্রকাশিত ১৯৭৭) ৩০. বিবর্তনবাদ ও সুষ্টিতত্ব (প্রকাশিত ১৯৭৭) ৩১. উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (প্রকাশিত ১৯৭৭) ৩২. জিহাদের তাৎপর্য দেহলভীর সমাজ দর্শন ৩৩. বিশ্ব সমস্যা ও ইসলাম ৩৪. অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম ৩৫. আল- কুরআনের আলোকে শিরক ও তাওহীদ ৩৬. আল-কুরআনের আলোকে রাষ্ট্র ও সরকার ৩৭. আসলাম ও মানবাধিকার ৩৮. রাসুলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত ৩৮. শিক্ষা ও সংস্কৃতিউর্দু থেকে অনুবাদ :৪০. ইসলামের জীবন পদ্ধতি (প্রকাশিত ১৯৪৯) ৪১. ইসলামের হাকীকত (প্রকাশিত ১৯৫০) ৪২. নামাজ রোজার হাকীকত (প্রকাশিত ১৯৫১) ৪৩. জাকাতের হাকীকত (প্রকাশিত ১৯৫১) ৪৪. হজ্জের হাকীকত (প্রকাশিত ১৯৫০) ৪৫. জিহাদের হাকীকত ৪৬. ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি (প্রকাশিত ১৯৫৪) ৪৭.আমাদের অভ্যান্তরীন ও বৈদেশিক সমস্যা (প্রকাশিত ১৯৫৪)৪৮. মুসলমানদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মসূচী (প্রকাশিত ১৯৫২) ৪৯. আল্লাহর পথে জিহাদ (প্রকাশিত ১৯৫৫) ৫০. অর্থনৈতিক সমস্যার ইসলামী সমাধান (প্রকাশিত ১৯৫২) ৫১. ইসরামী শাষনতন্ত্রের মূলনীতি (প্রকাশিত ১৯৫৩) ৫২. ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রনয়ণ (প্রকাশিত ১৯৫৪) ৫৩. একমাত্র ধর্ম (প্রকাশিত ১৯৫৩) ৫৪.ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ (প্রকাশিত ১৯৫৫) ৫৫.ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি (প্রকাশিত ১৯৫৪) ৫৬.কাদীয়ানী সমস্যা (প্রকাশিত ১৯৫৪) ৫৭.ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক মতবাদ (প্রকাশিত ১৯৬০) ৫৮.তাফহীমুল কুরআন ১৯ খন্ডে ৫৯. সমাজ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা (প্রকাশিত ১৯৭৭) ৬০. ইসলাম ও জাহেলিয়াত (প্রকাশিত ১৯৫৫) ৬১. ইসলাম ও জাতীয়াতাবাদ, (প্রকাশিত ১৯৫৭) ৬২. হযরত মুহাম্মদ-এর রাষ্ট্র ব্যবস্থা ৬৩. ইসলামী রাষ্ট্র সম্ভবপর? ৬৪. ঈমানের হাকীকত (প্রকাশিত ১৯৫২)আরবী থেকে অনুবাদ৬৫. ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ৬৬.জাতির উত্থান পতন ও পুনরুত্থা ৬৭.কিতাব-আত্তাওহীদ ৬৮.ইসলামের জাকাত বিধান, ১ম ও ২য় খন্ড ৬৯. ইসলামে হালাল ও হারামের বিধান ৭০. বিংশ শতাব্দির জাহেলিয়াত ৭১. আহ্কামুল কুরআন ৭২. দ্বীন ইসলামের বৈশিষ্ট্য।অপ্রকাশিত গ্রন্থাবলী৭৩.জাতি ও জাতীয়তাবাদ ৭৪.অপরাধ দমনে ইসলাম ৭৫. ইসলামী শরীয়াতের উৎস ৭৬. হাদীছ শরীফ ৫ম খন্ড ৭৭. দাস প্রথা ও ইসলাম ৭৮. সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ৭৯. শ্রম ও শান্তি ৮০. উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষার বিকাশ ও বিস্তার ৮১. জাকাত ও উসর ৮২. ইতিহাস বিজ্ঞান ৮৩. সৃষ্টিতত্ত্ব ৮৪. ইসলামী নীতি দর্শন ৮৫. কুরআন কিভাবে পড়তে হবে ৮৬. আল-কুরআনে নবুয়্যত ও রিসালাত ৮৭. ভাই-বোন প্রিয়া (উপন্যাস) ৮৮. চির অনির্বান (হারিয়ে গেছে)।বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামাওলানা আব্দুর রহীম নিঃসন্দেহে বিংশ শতাব্দীর একজন সেরা আলিম ছিলেন। তিনি আমাদেরকে রেখে চলে গেছেন আজ ৩৩ বছর হলো। কিন্ত তিনি মরে গিয়েও আমাদের মাঝে তিনি তাঁ জ্ঞানের জগতে সমুজ্জল হয়ে রয়েছেন। জীবিত আব্দুর রহীমের চেয়ে মৃত আব্দুর রহীম যেন ফুলে-ফলে সুশোভিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তার জীবন জ্ঞান গবেষণা এবং তার রাজনীতি জবিন নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ৮টি এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন হয়েছে। তাকে নিয়ে আরো সাতটি পিএইচডি ডিগ্রী হতে পারে বলে প্রাজ্ঞজন মনে করেন। মহাসত্যের সন্ধানে, বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব কমিউনিজম ও ইসলাম, ইসলামের দৃষ্টিতে বিজ্ঞান, পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলামী সমাজ, পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার এ গ্রন্থগুলোর এককটির উপর একটি করে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রীহতে পারে। তার অনেক গ্রন্থই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যভুক্ত।এছাড়াও মাওলানার লেখা প্রবন্ধরাজী, চিঠি-পত্র এবং ক্যাসেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।তিনি ১৯৮৭ সনের ১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ঢাকার রাশমনো হাসপাতালে দুপুর ১২.২০ ঘটিকায় ইহধাম ছেড়ে পরপারে যাত্রা করেন।মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহিম (রহ.) বাংলা ভাষায় দ্বীন উপস্থাপনার অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বাংলায় ইসলামি রাজনীতির অগ্রনায়ক ও পথিকৃত বলা চলে তাকে।তবে শেষ জীবনে গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি দ্বীমত পোষণ করেন এবং প্রচলিত রাজনীতি থেকে দূরে সরে দাঁড়ান।ইসলাম বুঝার ক্ষেত্রে মাওলানার রচনাগুলো একজন সত্যান্বেষী মানুষের অপরিহার্য্য বিষয়।অনালোচিত ও আমাদের স্মৃতিপট থেকে হারিয়ে যাওয়া সময়ের এই শ্রেষ্ঠ মানুষটি চলে যাবার দিনে তাকে স্মরণ করা উচিৎ এবং তা জন্য দোয়া করা উচিৎআল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।