ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ময়মনসিংহের ভালুকায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত কিশোরীর অর্ধগলিত লাশের পরিচয় মিলেছে। তার নাম মিনু আক্তার, বয়স ১৫ বছর। সে কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার দীঘলআইলা গ্রামের মিলন মিয়ার মেয়ে। তার মায়ের নাম মাহমুদা বেগম।
ওই ঘটনায় উলিপুরের কাছুয়া শেখের ছেলে শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। শফিকুল সম্পর্কে মিনুর সৎবাবা। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ গতকাল শনিবার (২৫ জুন) সকালে কুড়িগ্রামের নিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। মিনুকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। ভালুকা মডেল থানার এসআই নজরুল ইসলাম আদালতে শফিকুল ইসলামের দায় স্বীকারের বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।থানা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম ও পোশাককর্মী মাহমুদা বেগম তাদের স্ত্রী ও স্বামীকে তালাক দিয়ে এক-দেড় বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা কিশোরী মিনু আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে শফিকুল ইসলাম ব্যবসার কথা বলে স্ত্রী মাহমুদা বেগমকে তার (মাহমুদা) আগের কর্মস্থল চট্টগ্রামের একটি কারখানা থেকে পাওনা ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এনে দেওয়ার জন্যে চাপ দেন। কিন্তু ওই মাহমুদা মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেছেন বলে জানিয়ে দেন স্বামী শফিকুলকে। পরে পাওনা টাকা আনার জন্যে মাহমুদা বেগম গত ৭ জুন চট্টগ্রামে যান।
এদিকে, শফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীর টাকা কীভাবে নেয়া যায় তা নিয়ে বন্ধু রিপনের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাদের আলোচনায় উঠে আসে, টাকা পাওয়ার জন্য পথে কাঁটা মিনু। তারা দুজনই মিনুকে পথ থেকে ‘সরিয়ে’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে মায়ের অনুপস্থিতিতে শফিকুল গত ৮ জুন রাতে ঘরে ঘুমন্ত মিনুকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ভাড়া বাসার পাশের এক জঙ্গলে ফেলে আসেন এবং পরদিন রাতে ওই লাশ একই এলাকায় প্রস্তাবিত একটি কারখানার বাউন্ডারির ভেতরে পুঁতে রাখেন। মাটিচাপা অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে সরে গিয়ে তার পা বেরিয়ে আসে। পরে স্থানীয়রা গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সকালে লাশ দেখে পুলিশকে জানায়।খবর পেয়ে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ অর্ধগলিত ওই লাশ এবং একটি কোদাল উদ্ধার করে। পরে ওই ঘটনায় হত্যা মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। গোপন সূত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কুড়িগ্রামের নিজবাড়ি থেকে মিনুর সৎবাবা শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গতকাল শনিবার (২৫ জুন) আদালতে পাঠায় পুলিশ। মিনুকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন শফিকুল ইসলাম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার ওসি কামাল হেসেন জানান, অজ্ঞাত কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া মামলা নেয়ার একদিন পরই এক আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।