নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শ্লোগান দিয়ে জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্লবী থানা সংলগ্ন ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর এর আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করার কথা ছিলো জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর। বেলা ৪টার দিকে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ও স্থানীয় দুই শতাধিক রোজাদার ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পল্লবী ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হন। এসময় ৩০ থেকে ৪০ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে উপস্থিত হয়ে অশালীন শ্লোগান দিয়ে ইফতার অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিড়ে ফেলে। এসময় রোজাদারদের গলাগাল দিয়ে হলরুম থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে হলরুম ও গেটের সামনে জড়ো হয়ে অশালীন ব্যাক্যে শ্লোগান দেয় উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা। ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পরে দুই শতাধিক রোজাদার ফিরে যান। রমাজানের পবিত্র মাসে এহেন আচরণে ক্ষোভ ও ধিক্কার জানিয়েছেন রোজাদার ও স্থানীয়রা।
- Advertisement -
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে জাতীয় পার্টির ইফতার অনুষ্ঠানে বাঁধা দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমরা মাঠে ছিলাম। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির দুইজন নেতা শহীদ হয়েছেন। অনেকেই মামলা ও হামলার শিকার হয়ে কারাবাস করেছেন। এছাড়া বিগত সরকারের সকল দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম।
অথচ, বর্তমান সরকার আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করছে। মিছিল ও সমাবেশের ন্যায় অহিংস স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, তা থেকে আমাদের বঞ্চিত করছে। তাছাড়া, বিভিন্ন স্থানে আমাদের পার্টি অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার পরও পাওয়া যায়নি। এমনকি পরবর্তীতে থানায় জিডি (জেনারেল ডাইরী) করতে গেলেও দায়িত্বরত ব্যাক্তিগন তা গ্রহনে অনীহা প্রকাশ / অস্বীকার করেছেন।
বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার ও বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আটককৃতদের জামিন দেয়া হচ্ছেনা। ফলে দোষী সাব্যস্ত না হয়েও শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে নিরপরাধ মানুষ কারাভোগ করছে। এ ধরনের হয়রানির মাধ্যমে আমাদের দলীয় কর্মকান্ডে যোগ না দিতে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে । ফলে বলা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনেক আগেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের আনুকূল্যে নতুন দলটি ক্ষমতার জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করতে চাইবে। এমন বাস্তবতায় পক্ষপাতদুষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বোকামী।
তা ছাড়া বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃষ্টে এ কথা বলা যায় গ্রহনযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যে শক্তি ও সামর্থ দরকার তা এই সরকারের নেই। দেশের বেশীর ভাগ মানুষ এখন মনে করে এ সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকারের কোন নির্বাচনই বিশ্বাসযোগ্য হবে না, দেশ বিদেশে গ্রহণ যোগ্য হবেনা।
বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন এই অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে বেকারত্ব। এরই মধ্যে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হচ্ছে। একারণেই, দেশে অভুক্ত ও অর্ধভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে রাজনীতির নামে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের জন্য উশৃঙ্খল জনতার অভাব হয় না। সরকার ঘনিষ্ঠ মহল ভাবাদর্শের এ সকল জনতাকে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী বাঁধা দিচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই সুযোগে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী বাহিনী যে কাউকে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে তার সহায় সম্পদ লুটপাট করতে পারছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে মবক্রেসী বা মবতন্ত্র চলছে। সম্প্রতি গুলশানের একটি বাসায় লুটপাটের ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে, অথচ লুটের ঘটনায় ৮০/৯০ জন মানুষ উপস্থিত ছিল বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়। বাকি মানুষ কি কারনে দায় মুক্তি পেল, বোঝা গেল না। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মনোবল দূর্বল করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে ঢালাও ভাবে বিগত সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করায় তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালনকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারনে ঝুকি মনে করছে ও তারা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে না, ধারনা করি। এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হবে বলে আশঙ্কা হয়।
খন্দকার দেলোয়ার জালালী
যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর প্রেস সেক্রেটারি।