খেলাধুলা ডেস্ক উজান গাঙে বৈঠা ঠেলে তীর পাওয়া মাঝি মোহাম্মদ শামি, যাঁকে নিয়ে গল্প করা যায়। ব্যক্তি জীবনে দুর্দশা, ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ, সেখান থেকে হতাশা, সঙ্গে ইনজুরির ঝক্কি-ঝামেলা, কি ছিল না তাঁর ক্যারিয়ারে! ‘যে কূল ধইরা চলেরে নদী সে কূল ভাইঙ্গা যায়’ কবিতার লাইনের মতো ভেঙে পড়েছিলেন শামিও। বেছে নিতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যার পথ। কিন্তু দুই শব্দের ‘আই কুইট’ বাক্য না লিখে ‘বি চ্যাম্পিয়ন’ পথে হেঁটেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসার।ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কুড়িয়ে পাওয়া এক সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন মোহাম্মদ শামি। হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরিতে একাদশে ঢুকে দু’বার ফাইফারসহ তিন ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ১৪ উইকেট। বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডেতে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাধিক চারবার ফাইফার তাঁর। টানা দুই বিশ্বকাপে তিনবার করে ইনিংসে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। সব মিলিয়ে শামি যেন ভারতীয় দলের জন্য জসীম উদ্দীনের কাব্যগ্রন্থ ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনিই তো ‘উজান গাঙের নাইয়া’। আর এই দুই মিলিয়ে শামি ‘উজান গাঙের রঙিলা মাঝি’।
হৃদয় ভাঙার গল্পে শামির ক্রিকেট শুরু। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক কারণে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পাননি তিনি। ভাঙা হৃদয়ে নতুন স্বপ্ন বুনে উত্তর প্রদেশ থেকে কলকাতা চলে আসেন তিনি। ২০১০ মৌসুমে রঞ্জি, ২০১১ আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল শুরু করেন। ‘এ’ দল হয়ে ২০১৩ সালে জাতীয় দলে অভিষেক তাঁর। দুঃসময় কাটিয়ে এসেছেন; এমন ভেবে প্রেমিকা হাসিন জাহানের সঙ্গে ২০১৪ সালে ঘর বাঁধেন। ২০১৫ সালে সংসারে আসে ফুটফুটে কন্যা। এরপর জীবনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। ২০১৮ সালে স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এমনকি ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তোলা হয়!আদালতে হাজিরা দেওয়া, ভক্তদের গালির সঙ্গে নেতিবাচক খবরে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিলেন শামি। বোর্ড পাশে থাকায় ওই দুঃসময় কাটিয়েও উঠেছিলেন। তবে ২০২০ সালে এক ভিডিওতে রোহিত শর্মার কাছে শামি স্বীকার করেছিলেন, নরক যন্ত্রণার কথা। একাধিকবার নাকি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর ব্যক্তি জীবনের হতাশার ছাপ অবশ্য মাঠে খুব একটা পড়েনি। ২০১৯ সালে শামি ভারতের হয়ে দ্রুততম ৫৬ ম্যাচে ১০০ ওয়ানডে উইকেট নেন। ওই বছরের বিশ্বকাপেও বল হাতে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত।শামির মানসিক দৃঢ়তা ছিল, পরিশ্রম করে গেছেন। সঙ্গে তাঁর আগুন ঝরানো বোলিংয়ের পেছনে ভূমিকা আছে ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির। বেঙ্গালুরুর একাডেমি ল্যাবরেটরিতে তাঁর বোলিং নিয়ে সেখানকার কোচ রীতিমতো গবেষণা করেছেন। তাঁর রানআপ কমিয়ে, রানিং মসৃণ করে, বল ডেলিভারির আগে দেওয়া লাফে পরিবর্তন এনে ঘষেমেজে তৈরি করা হয়েছে। এতে তাঁর বোলিংয়ে গতি বেড়েছে, লাইন-লেন্থ ঠিক হয়েছে। একাডেমিতে ফিটনেস নিয়েও অনেক কাজ করেছেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে আইসিসিকে সাক্ষাৎকারে তাই জাতীয় দলের বোলিং কোচের পাশাপাশি ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির কোচকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়েছিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২১৪ উইকেট নেওয়া শামি।