LastNews24
Online News Paper In Bangladesh

ট্রেনের কামরাটি হয়ে গেল অপারেশন থিয়েটার!

0

বিশেষ প্রতিবেদক  ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পাশে দাঁড়ালেন চিকিৎসক, নার্সসহ একদল মানুষ। আর তাতে ট্রেনের মধ্যেই সেই নারী অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। ট্রেনের মধ্যে রক্তপাত হয়ে তার গর্ভে থাকা চারমাসের নবজাতক মারা যায়। ঢাকা-চিলাহাটীগামী আন্তঃনগর চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনের মধ্যেই ওই নারীর মৃত বাচ্চা প্রসব করান ট্রেনে থাকা চিকিৎসক ও নার্সরা। ট্রেনের কামরা হয়ে যায় অপারেশন থিয়েটার।ওই ট্রেনে দায়িত্বরত পার্বতীপুর হেডকোয়ার্টারের টিটিই আমিরুল হক জাহেদী বলেন, ট্রেনটি ঢাকা থেকে চিলাহাটী যাচ্ছিল। বরাবরের মতোই ট্রেনের পেছনের কোচ থেকে টিকিট চেকিং শুরু করি। সাথে ছিলেন আরেক টিটিই বেলাল হোসেন। রাত ৮টা নাগাদ ট্রেনটি তখন গাজীপুরের মহেড়া স্টেশন পার হচ্ছিল। টিকিট চেক করতে ট্রেনের জ নম্বর কোচে যাবার পর হঠাৎ করে শাহিন আলম নামের এক যাত্রী জানান ঘ নম্বর কোচে একজন গর্ভবতী মহিলা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাথে সাথে আমার পেছনে থাকা গার্ড সিফাত হোসেনকে জানাই দ্রুত পিএ অপারেটরকে ট্রেনের মাইকে একটা ঘোষণা করতে যে, ‘ট্রেনের মধ্যে যদি কোনো ডাক্তার থাকেন তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ঘ কোচে তাকে বিশেষ প্রয়োজন, একজন গর্ভবতী নারী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ মাইকিং করার পর একজন ডাক্তারকে (ঢাকার ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সানাউল্লাহ) জ কোচ থেকে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর চ কোচ থেকে ৫ম বর্ষের একজন শিক্ষানবীশ নারী ডাক্তারও (রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী ডা. আফসানা ইসলাম রোজা) আসলেন। মাইকিং শুনে দুজন নার্সও দ্রুত ঘ কোচে ছুটে গেলেন। অসুস্থ নারীর রক্তপাত যেন থামছেই না, গর্ভে থাকা চারমাসের নবজাতক গর্ভেই মারা গেল। নারী ডাক্তার, নার্সরা ওই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কাজ করে যাচ্ছিলেন। ঘ কোচের নারী যাত্রীরা নিজেদের কাছে থাকা কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন পুরো জায়গাটা। তিন আসনের চেয়ারের সারিটা যেন সেই মুহূর্তে হয়ে যায় অপারেশন থিয়েটার। এদিকে, ওই নারীর স্বামী কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। একজন যাত্রী জানান তার পকেটে মাত্র ১২০০ টাকার মতো আছে। তাৎক্ষণিক সব যাত্রীরা যে যার মতো টাকা সংগ্রহ করা শুরু করলেন। প্রায় পাঁচ হাজারের মতো টাকা রোগীর স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হলো। ডা. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমার বাড়ি দিনাজপুরে। গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। ট্রেনের মধ্যে মাইকে ঘোষণা শুনে একজন চিকিৎসক হিসেবে বসে থাকতে পারিনি। যদিও ট্রেনের মধ্যে কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঢাল-তলোয়ার কিছু ছিল না, যে কারণে চ্যালেঞ্জ ছিল। তার মধ্যেই সবার সহযোগিতায় নারীর প্রসব করানো সম্ভব হয় এবং তিনি বেঁচে যান। বড় কোনো বিপদ হয়নি। আমরা প্রথমে টাঙ্গাইল স্টেশনে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পাঠানো পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম তিনি স্বাভাবিক আছেন। এ যেন সিনেমার কাহিনীর মতো। আমার জীবনে একটি অনন্য ঘটনার স্বাক্ষী হলাম।’

About Author

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More