কামাল হোসেন: বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল সম্প্রতি গত তিন দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে, যা দেশটির জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে যে দেশগুলো সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। এবারের বর্ষা মৌসুমে দেখা দেওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা ছিল নজিরবিহীন।
এই বন্যায় প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২০ লাখেরও বেশি শিশু রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ফসল বিনষ্ট হয়েছে, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে, ফলে মায়েরা ও নবজাতকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশেষত শিশুদের ওপর বন্যার প্রভাব গভীর। অনেকে প্রিয়জন, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্যসেবার অভাবে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতায় শিশুদের জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং আশ্রয় ব্যবস্থা করা হলেও এখনও সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।
চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তারা সংকটপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছে। নারী ও শিশুরা বিশেষভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এবং তাদের ওপর সহিংসতার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
বন্যা-পরবর্তী সময়ে শিশু ও তাদের পরিবারগুলোর জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ ও অন্যান্য সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। তবুও সংকট উত্তরণে দীর্ঘ সময় লাগবে।
বাংলাদেশের এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য আরও তহবিল এবং সহায়তা প্রয়োজন।