‘জলবায়ু অর্থায়নে ধনী দেশগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে’

0
পরিবেশ প্রতিবেদকঃ আগামী ২০২৫-২০৩০ সময়কালের জন্য নতুন সম্মিলিত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে (এনসিকিউজি) ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, ধনী দেশগুলোকে তাদের মোট জাতীয় আয়ের একটি অংশ ওই তহবিলে দিতে হবে। তাদের কার্বনমুক্ত বিশ্ব গড়তে জীবাশ্ম জ্বালানি সমাপ্তির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করতে হবে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯) স্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।‘স্বল্পোন্নত ও অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর জনগণের প্রত্যাশা এবং কপ২৯’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশাবিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডির আমিনুল হক। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বাংলাদেশ থেকে মৃত্যুঞ্জয় দাস, নেপাল থেকে অভিষেক শ্রেষ্ঠা, ভারত থেকে সৌম্য দত্ত, শ্রীলঙ্কা থেকে থিলাক কারিয়ভাসান এবং ফিলিপিন্সের মারিয় টেটেট লোরন।

মূল প্রবন্ধে আমিনুল হক বলেন, বিশ্বনেতারা প্রশমন এবং অর্থায়ন উভয় ক্ষেত্রেই তাঁদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরা প্রায়ই নিত্যনতুন ধারণা এবং অস্পষ্ট সমাধান নিয়ে আসেন, যা অতি বিপদাপন্ন দেশগুলোর অগ্রাধিকার চাহিদাকে বাধাগ্রস্ত করে। কপ২৯ আলোচনায় প্রস্তাবিত এক বিলিয়ন ডলারের ‘ক্লাইমেট ফাইন্যান্স অ্যাকশন ফান্ড’ তেমন একটি অস্পষ্ট ধারণা, যা আসলে নতুন জলবায়ু আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিতে ট্রিলিয়ন ডলার নিশ্চিতের মূল দাবি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কৌশলমাত্র।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করতে ব্যর্থ হলে জলবায়ু অর্থায়ন কোনো কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই জনগণের চাহিদা উপেক্ষা করে এমন সব অবাস্তব ধারণা পরিবর্তন করতে হবে ও পরবর্তী ১০ বছরের (২০২৫-৩৫) জন্য প্রশমন ও অর্থায়ন উভয় ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্যকর ফলাফল পেতে ২০৪০ সালের মধ্যে সব কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সমাপ্তি টানতে সর্বাধিক দূষণকারী রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক রাজনৈতিক ঘোষণা দিতে হবে।

বিদ্যমান জলবায়ু অর্থায়নব্যবস্থা অন্যায্য ও ঋণনির্ভর। তাই জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরিকল্পনায় অবশ্যই উন্নত দেশগুলোর জিএনআইয়ের একটি অংশ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই তহবিলটি এনসিকিউজি-এর সাবসেক্টরগুলোকে অনুসরণ করে বিতরণ করতে হবে।ভারতের সৌম্য দত্ত বলেন, ‘শূন্য কার্বন নিঃসরণ ইস্যুতে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আগের জলবায়ু সম্মেলনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা মনে করি সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তেল উত্পাদনকারী দেশগুলোকে এক করে তাদের রাজি করানোর বিষয়ে আজারবাইজানের নেতৃত্ব দেওয়ার এটি একটি চমৎকার সুযোগ। আমরা আশা করি, আজারবাইজান ইউএনএফসিসিসির সমঝোতা আলোচনা ব্যবহার করে উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেবে।

কিন্তু আজারবাইজানের বর্তমান গতিপথের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা বিভ্রান্ত, এই সুযোগটি হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ফিলিপিন্সের টেটেট ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, বৈশ্বিক সরকারি অর্থায়ন বিষয়টি এখন উভয় সংকটের সম্মুখীন। ধনী দেশগুলোর এবং তাদের আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ সরবরাহের জন্য বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। সরকারকে অবশ্যই বেসরকারি খাতের ওপর তাদের অতিনির্ভরতা বন্ধ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার কারণে ক্রমাগতভাবে তহবিল সংকুচিত হচ্ছে ও অর্থপ্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে।

- Advertisement -

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.