চার মাসে চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ

0
বিশেষ প্রতিবেদকঃ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৯ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই সময় চিংড়ি রপ্তানি হয় ৫ হাজার ৯২৪ টন। যার বাজার মূল্য ছিল ৭০৬ কোটি টাকা। গত চার মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১৮৯ কোটি টাকার বেশি।তবে নানা সংকটের পাশাপাশি ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে একে ‘সাময়িক লাভজনক চিত্র’ বলে দাবি করছেন রপ্তানিকারকরা। তাদের মতে, চিংড়ির উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমছে। লোকাল মার্কেটে উচ্চমূল্যে বাগদা-গলদা বিক্রি হওয়ায় কোম্পানিগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে তুলনামূলক কম চিংড়ি রপ্তানি করেও টাকার অঙ্ক বেশি পাওয়া যাচ্ছে।মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খুলনা জেলার ৯টি উপজেলায় মিঠা ও লবণাক্ত পানির ঘের ছিল ৫১ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে। চিংড়ি উৎপাদন হয় ২৩ হাজার ৪২২ টন। জানা যায়, পাঁচ বছরের ব্যবধানে জেলায় চিংড়ি ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর। উৎপাদন কমে গেছে ৩ হাজার ৭৫২ টন।জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বাগদা-গলদা চিংড়ির রপ্তানিতে ধস নামে। করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয় ২৪ হাজার ১০৪ টন। যার বাজার মূল্য ২৬১১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি হয় ১৯ হাজার ৯০৫  টন। যার বাজার মূল্য ২৪১২ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি হয় ১৫ হাজার ৪৫১ টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১৭৪৪ কোটি টাকা।খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, চলতি বছরে খুলনার বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চাষ শুরু হয়েছে। ‘গ্রোথ রেট’ বেশি হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ১০ টনের বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। কম সময়ে ভেনামি উৎপাদন হওয়ায় বছরে দুই থেকে তিনবার চাষ করা সম্ভব। তিনি বলেন, দেশে ব্যাপক হারে ভেনামি চাষ শুরু হলে এর রপ্তানি সম্ভাবনাও বাড়বে। কিন্তু একবার রপ্তানি শুরু হলে যে ‘মার্কেট চেইন’ তৈরি হবে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী সরবরাহ না করতে পারলে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই কারণে আরও কয়েক বছর উৎপাদন পরিমাণ যাচাই করে ভেনামি রপ্তানি শুরু করলে সফলতা মিলবে।রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন সরকার অধিক উৎপাদনশীল ভেনামি জাতের চিংড়ি চাষে অনুমতি দিলেও তাতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ, পানি শোধনাগার, পোনা সংকটসহ নানা কারণে ভেনামি চাষ ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। তিনি বলেন, চিংড়ির উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন ও ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষাবাদে (১০-১৫ জন চাষি একসঙ্গে উৎপাদন করবেন) সাড়া মিলেছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে চিংড়ির উৎপাদন ও  রপ্তানি বাড়বে।বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক তরিকুল ইসলাম জহির বলেন, গত কয়েক বছরে হিমায়িত চিংড়ির উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। কাঁচামালের অভাবে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কম চিংড়ি রপ্তানি করেও টাকার অঙ্ক বেশি দেখা যাচ্ছে। এটি প্রকৃত চিত্র নয় বলে তিনি দাবি করেন। তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন চলতি বছরে খুলনার বটিয়াঘাটা পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চাষ শুরু হয়েছে। ‘গ্রোথ রেট’ বেশি হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ১০ টনের বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। অধিকহারে উৎপাদনে ভেনামি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এতে চিংড়ি কোম্পানিগুলোও তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারবে।

- Advertisement -

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.