আড়াই ঘণ্টা পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে চিন্ময়ের ভক্ত ও সমর্থকদের সরিয়ে দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাংবাদিক, পথচারী, পুলিশসহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়।চিন্ময়ের সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার সময় আদালতে রাখা ছয়টি গাড়ি ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। গতকাল চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ, লালদীঘির পার ও রঙ্গম কনভেনশন হল এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তার ভক্তরা প্রিজন ভ্যানের আশপাশে অবস্থান নেয়।অনেকে ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়ে। পুলিশ তাদের বারবার সরে যেতে অনুরোধ করলেও তারা শোনেনি। তারা চিন্ময় কৃষ্ণের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ধাওয়ায় চিন্ময় কৃষ্ণের ভক্ত ও সমর্থকরা ছতভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত প্রাঙ্গণে একটি মসজিদ কমপ্লেক্সে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং নিচতলার একটি কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ছয়টি গাড়ি ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। ভক্তরা এলোপাতাড়ি পাথর ছুড়তে থাকে।
এক পর্যায়ে রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাইফুল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জামাল উদ্দিনের ছেলে। এই আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় তার সহকর্মী ও সাধারণ মানুষ আদালতের প্রবেশপথ ও লালদীঘি এলাকায় বিক্ষোভ করে। সাইফুলের মৃত্যুর জন্য ইসকন সমর্থকদের দায়ী করেছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, ইসকন সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের লালদীঘি ও রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিককে বলেন, ‘ইসকন সমর্থকরা সাইফুলকে রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে আজ বুধবার আদালত বর্জন করা হবে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার রইস উদ্দিন সাংবাদিককে বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় তার ভক্তরা প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান নেয়। বারবার অনুরোধ করা হলেও অবস্থানকারীরা সরে যায়নি। তারা আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে। পরে লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এরপর পুলিশের একটি গাড়িতে করে চিন্ময় কৃষ্ণকে কারাগারে নেওয়া হয়। কারাগারে নেওয়ার সময় চিন্ময় সমর্থকরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পরে বিভিন্ন অলিগলিতে চিন্ময় সমর্থকরা মিছিল করার চেষ্টা করে। এই সময় ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতাল ছাড়াও আহত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৯ জন। তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল মন্নান।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ সাংবাদিককে বলেন, ‘আমরা আদালতে জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন। আমরা আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের চিকিৎসাসেবা প্রদান, ধর্মীয় বিধান প্রতিপালনের নিমিত্তে খাবার সরবরাহ ও তাকে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। বুধবার এটি শুনানির জন্য রয়েছে।’
- Advertisement -