বিশেষ প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রামে প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি প্রভাবশালীদের কাছে অবৈধ দখলে রয়েছে। জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করে ও প্রভাব খাটিয়ে জবরদখলে রেখেছে প্রভাবশালীরা। বনভূমির এসব জায়গায় মাল্টা বাগান, পানের বরজ, পুকুর খনন করে মাছ চাষ, পার্ক, মাছের ঘের, শিপ ইয়ার্ড ডেইরি খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ভোগ করা হচ্ছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বন বিভাগের গাছাড়া ভাব।বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে শতশত মামলা রয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের কাছে অবৈধ দখলদারদের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। বনভূমি লিজ দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে এসব ভূমি দখল করে ভোগ করছে।চট্টগ্রামে উত্তর ও দক্ষিণ দুই বিভাগে মোট বনভূমির পরিমাণ আড়াই লাখ একর। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও কয়েক জন ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ বনভূমি দীর্ঘদিন যাবত দখলে রেখেছে। কেউ কেউ জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করেছে। এসব বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। অবৈধ দখলমুক্ত করতে বন বিভাগের নিজস্ব জনবল নেই। উচ্ছেদ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ র্যাবের সহায়তা ছাড়া করা যায় না।চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ জানায়, তাদের বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার একর। রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী উপজেলার বনভূমি নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ গঠিত। তাদের সাড়ে ১৫ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে ছিল। তার মধ্যে গত ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৫০০ একর বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এসব বনভূমি অবৈধ দখলদার রয়েছে ১ হাজার ১৩২ জন। সম্প্রতি সময়ে কয়েক বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় লোহাগাড়া উপজেলায় সাবেক এমপি আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভীর কাছে অবৈধ দখলে থাকা ২৪৩ একর, রাঙ্গুনিয়ায় এরশাদ মাহমুদের অবৈধ দখলে থাকা ২১২ একর অবৈধ বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। গত সোমবার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায় জনৈক এ জে চৌধুরীর অবৈধ দখলে থাকা ৫০ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বনভূমিতে করা হয়েছে পানের বরজ, মাছের ঘের ও মাল্টা বাগান।চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবৈধ দখলদারগণ প্রভাবশালী। উদ্ধার অভিযান করতে ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন। আমরা উচ্ছেদ অভিযানে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সম্প্রতি সময়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রায় ৬০০ একর বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এখানে আমরা বনায়ন করব।’চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের অধীনে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৮ হাজার এক বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। দখলদারের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার জন হবে। কর্মকর্তারা জানান, মিরসরাই, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম মহানগর বনভূমি বন বিভাগ উত্তরের অধীনে রয়েছে। সীতাকুণ্ড এলাকায় ও মিরসরাই এলাকায় দুই জন প্রভাবশালী শিল্পপতির অবৈধ দখলে ৬৪৮ একর বনভূমি রয়েছে। এসব বনভূমি নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও অবৈধ দখলদারগণ এসব বনভূমি ভোগ করে চলেছে। নগরীর প্রবর্তক পাহাড় এলাকায় প্রায় ৮ একর বনভূমি অবৈধ দখলে রেখেছে একটি সনাতনী ধর্মীয় সংগঠন। তারা পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করছে। এসব বনভূমি নিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে মামলা চলছে।বন বিভাগ উত্তরের সহকারী বন কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা ১৩২ জন অবৈধ দখলদারের নামের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে উচ্ছেদের জন্য জমা দিয়েছি। মামলা বিচারাধীন থাকায় উচ্ছেদ অভিযানও চালানো যাচ্ছে না।’এছাড়া উপকূলীয় বন বিভাগের অধীনে থাকা সমুদ্র উপকূলের প্রায় ৪০০ একর ভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। সমুদ্র উপকূলীয় এসব জমিতে মাছের ঘের, লবণ চাষ, পুরাতন জাহাজ ভাঙার শিপ ইয়ার্ড নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, উপকূলীয় জমির মালিকানা নিয়ে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এসব জমির খতিয়ান জেলা প্রশাসনের নামে। আবার ১৯৮৫ সালে জারিকৃত গেজেটে উপকূলীয় এসব জমি বনবিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে এসব উপকূলীয় জমি প্রভাবশালীরা জেলা প্রশাসন থেকে লিজ নিয়ে ভোগদখলে রেখেছে।