এস এম বদরুল আলম : কাজ না করে বিল উত্তোলন ও ভুয়া বিল ভাউচারে সরকারের কোটি কোটি আত্মসাৎ করেও প্রাইস পোস্টিং নিয়ে ঢাকাতেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ। বর্তমানে প্রেষণে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এর ঢাকা ডিভিশন-১, মিরপুরে রয়েছেন। এর আগে তিনি ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩, ঢাকা মেট্টোপলিটন জোন এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব ওয়ার্কিং জোনে পোস্টিং তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার বলে পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।ঢাকা মেট্টোপলিটন জোনের স্টাফ অফিসার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়নের পুর্বে তিনি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। তখন ২০২১-২২ অর্থবছরে ২২৫টি কাজের চাহিদা দিয়েছিলেন। যা মেরামতের কাজের প্রাক্কলন ও নামমাত্র কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভুয়া কাজ ও বিল ভাউচারে তিনি মোটা অংকের টাকা কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেছেন।বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে না দেবার জন্য গোঁজামিল দিয়ে, কখনও কাজ না করেই কাগজ-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে বিল দিয়ে দেন তিনি। ঢাকার তেজগাঁও ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের বাংলো-১-এর দরজা, জানালায় থাই গ্লাস লাগানো, টাইলস বসানো, রঙ করা এবং কেন্দ্রীয় রেকর্ড ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন মেরামত ও গ্যারেজ কাম-ড্রাইভার কোয়ার্টারের নিচতলায় গ্যারেজগুলোর সিলিং মেরামত, বিভিন্ন দরজা মেরামত, স্যুয়ারেজ লাইন মেরামত কাজের জন্য ২০২২ সালের ৫ জুন ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার একটি প্রাক্কলন অনুমোদন করেন ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে অনুমোদন পাওয়া এ কাজ শেষ না করেই ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ গোঁজামিল দিয়ে কাগজ-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দেন।এছাড়াও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না করা সত্ত্বেও আরোপযোগ্য বিলম্ব জরিমানা (খউ) কর্তন না করে নিজে ঠিকাদারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ঠিকাদারকে বিল প্রদান, চুক্তিমুল্যের উপর ঠিকাদার ইনস্যুরেন্স না করেই বিল উত্তোলন। উল্লিখিত পরিমাপ অপেক্ষা অতিরিক্ত পরিমাণ রেকর্ড করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করার অভিযোগ রয়েছে। এসকল বিলই তিনি ঠিকাদারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে দিয়েছেন।এর আগে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কায়সার ইবনে শাঈখের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১ এর উপ-সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম এক অফিস আদেশে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটিকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন।মন্ত্রণালয়ের ১৫.০০.০০০০.০১৩. ২৭. ০০১. ১০. ১০৯০/১(৪) নং স্মারকে চিঠিতে বলা হয়েছে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তপূর্বক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় তৎকালিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-২ এর অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী।সদস্য সচিব করা হয় সিনিয়র সহকারী সচিব তারিক হাসান। তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. মঈনুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) নন্দিতা রানী সাহা ওই বছরের ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ‘ভুয়া কাজ ও বিল ভাউচারে লোপাট ১০ কোটি টাকার বিষয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে’ শিরোনামে তার দপ্তরের ২৫.৩৬.০০০০.২১৩.২৭৫৫৯. ১৯.১০৮৭ নং স্মারকে একটি চিঠি ইস্যু করেন।তদন্তপূর্বক ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত প্রেরণ করার জন্য তদন্ত দলকে নির্দেশ দেন। একই বছরের ৭ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর আঞ্চলিক অফিসের সাবেক উপ-পরিচালক নাজমুস সায়াদাত ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ১০ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করলেও তিনি শাস্তি পাওয়ার বদলে প্রাইজ পোষ্টিং বাগিয়ে নেন।সচিব পর্যায়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির তদন্তের পরই তাকে ঝিনাইদহ থেকে সরিয়ে চাঁদপুর জেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে তিনি মাত্র ১০ মাস ১১ দিন চাকরি করেন। লীগ সরকারের ক্ষমতায় তিনি ঢাকার কর্মবহুল গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ-এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।