খুলনা প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুনেড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে আগুনে জ্বলে অঙ্গার হওয়া ফায়ারম্যান শাকিলের (২১) গ্রামের বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটায় চলছে শোকের মাতম।রবিবার বিকেলে পরিবারের কাছে তার মৃত্যুর খবর আসে। তবে শাকিলের মা এখনো জানেনা তার ছেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। মাকে জানানো হয়েছে সে অসুস্থ, শরীরের সামান্য অংশ পুড়ে গেছে। নিহত শাকিলের বাড়ী বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সুখদাড়া গ্রামে। পাঁচ মাস আগে বাগেরহাটের মোংলা থেকে চট্টগ্রামে সংযুক্তি হয় তার।জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় টিভিতে এবং ফেসবুকে ফায়ারম্যানদের নিহতের খবরে রোববার দুপুর থেকেই উৎকন্ঠা বাড়ে খুলনার বটিয়াঘাটার কৃতি সন্তান শাকিলের পরিবারে। সে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সুখদাড়া গ্রামের মোঃ সাত্তার তরফদারের ছেলে। গতকাল বিকেল ৪টা নাগাদ ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত আরেক চাচার মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয় তার পরিবার।তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মোঃ মনিরুজ্জামান তরফদার ও মেজ ভাই মোঃ রিপন তরফদার; দুইজনই একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করেন। তবে পরিবারের ছোট সন্তান শাকিল ছিলেন সবার প্রিয় আর আদরের। অন্যদিকে শাকিলের মা অসুস্থ্য হওয়ায় তার মায়ের কাছে ছেলের মৃত্যুর খবর না জানলেও তার মন ছেলেকে কাছে পেতে চায়। আর সকলকে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু কে শুনবে, তার কথা। কখনো কোরআন শরীফ, কখনো তজবিহ হাতে নিয়ে থেকে থেকে চিৎকার করে উঠছেন ফায়ার ফাইটার শাকিল তরফদারের মা জেসমিন বেগম।
চিৎকার করে শাকিলের মা জেসমিন বেগম বলেন, আল্লাহ যেন তার ছেলেকে দ্রুত সুস্থ করে দেন। আগামী বছর শাকিল আমাকে হজ্বে পাঠাবে। খুব কষ্ট করে, জমি বন্ধক রেখে তিন ছেলেকে মানুষ করেছি। শাকিলের ইচ্ছা ছিলো দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করবে। তার ইচ্ছানুযায়ী ফায়ার সার্ভিসে চাকুরী পায় সে।এদিকে শোকে বাকরুদ্ধ পিতা ও দুইভাইসহ গোটা গ্রামের মানুষ। তবে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি গর্বও হয় মনিরুজ্জামান তরফদার এবং রিপন তরফদার নামের শাকিলের অন্য দুই ভাইয়ের। তারা জানায়, আমাদের ভাই নিজের জীবনকে বিপন্ন করে অন্যের জীবন বাঁচাতে আগুনে ঝাপ দিয়েছে। আর এলাকাবাসীর দাবী, অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে জীবন দেয়া শাকিলের পরিবার যেন পায় সঠিক মূল্যায়ন।শকিলের চাচাতো ভাই মোঃ আজিম শেখ জানান, শাকিলের মরদের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হেড কোয়ার্টারে আনা হচ্ছে। সেখানে প্রথম জানাযা শেষে খুলনায় আসবে। খুলনা আসতে সোমবার গভীর রাত হতে পারে।