বিশেষ প্রতিনিধি কারাগারে দৈনিক পত্রিকা ও বই পড়ে সময় কাটছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তিনি আছেন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চম্পাকলিতে। সেখানে তাঁর কক্ষে বিটিভি দেখার সুযোগ থাকলেও তিনি দেখেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারাবিধি অনুযায়ী স্বজনরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে দলীয় কোনো নেতাকর্মী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাননি।এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাসসহ ১২ জন পেয়েছেন ডিভিশন। তাদের মধ্যে ছয়জন রয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চম্পাকলিতে। বাকিরা আছেন কাশিমপুর-১ ও কাশিমপুর-২ কারাগারে। এর বাইরে লে. জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দী ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আহসান হাবিবও ডিভিশন পেয়েছেন।গেল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও এবং পরে হরতাল-অবরোধ, সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলটির মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতা অনেকে এখন কারাবন্দি।কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের যে সুবিধা পাওয়ার কথা, তা দেওয়া হচ্ছে। অনেকের স্বজন দেখা-সাক্ষাৎ করতে আসছেন।
ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ আছেন কেন্দ্রীয় কারাগারে। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর (বীরউত্তম) ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল রয়েছেন কাশিমপুর-২ কারাগারে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার আছেন কাশিমপুর-১ কারাগারে। এর মধ্যে অসুস্থতার কারণে কারাবিধি অনুযায়ী আমান ও সালাউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
সাধারণত সামাজিক মান-মর্যাদা, অবস্থান বিবেচনা করে বিধি অনুযায়ী কারাগারে তিন শ্রেণির ডিভিশন দেওয়া হয়। প্রথম শ্রেণির ডিভিশন পাওয়া প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা কক্ষ থাকে। খাট, টেবিল-চেয়ার, তোশক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়নাসহ থাকে সবকিছুই। তাঁর কাজকর্ম করে দেওয়ার জন্য আরেকজন বন্দিও দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডিভিশন পাওয়া বন্দিরা বইপত্রের পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে , যুগান্তর, জনকণ্ঠ ও ডেইলি স্টারের যে কোনো একটি পড়ার সুযোগ পান। সাধারণের চেয়ে ডিভিশন বন্দির খাবার তালিকা আলাদা। ডিভিশন বন্দিদের সকালের নাশতায় রুটি, ভাজি, ডিম ও ডাল থাকে। দুপুরের খাবার হিসেবে ভাত, ডাল, সবজি এবং মাছ বা মাংস। রাতে থাকে ভাত, ডাল, সবজি ও মাছ বা মাংস।কারা সূত্র জানায়, কারও প্রয়োজন হলে বন্দিদের সরকারি খরচে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর পরও যদি কোনো ‘অপ্রচলিত’ ওষুধ কারও দরকার হয়, পরিবার চাইলে সরবরাহ করতে পারে। কারা চিকিৎসকরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বন্দিদের সেবন করার অনুমতি দেন।
বিএনপির কার্যালয়ের পুলিশি পাহারা এখন কিছুটা দূরে
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ সদস্যরা একটু দূরে সরে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা সরে যান। পাহারা দূরে সরিয়ে নেওয়া হলেও মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মীকে কার্যালয়মুখী হতে দেখা যায়নি; খোলা হয়নি তালা। কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরীকেও দেখা যায়নি।
ঢাকায় মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্ত্র হাতে সারিবদ্ধভাবে পুলিশ সদস্যরা পাহারায় থাকতেন। সংঘাতের পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কার্যালয়ের সামনে স্টিকার দিয়ে ঘেরাও করে তদন্ত চালায়। তখন পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ‘ক্রাইম সিন’ লিখে বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখার অর্থ হচ্ছে, ওই বেষ্টনী পেরিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবে না। অপরাধ তদন্তের জন্য সেখান থেকে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করছে। পুলিশের তদন্তকাজের এ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয় কার্যত বন্ধ থাকবে।এর দু’দিন পর কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। সোমবার রাতে কাঁটাতারের ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই সব ব্যারিকেড এখন মতিঝিল মডেল থানার কাছে রাখা হয়েছে। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার পর কার্যালয়ের সামনে পুলিশি পাহারা দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা কার্যালয়ের লাগোয়া ভিক্টোরিয়া হোটেলের পাশে অবস্থান নিয়েছে। কার্যালয়ের সামনে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওপরের নির্দেশে কার্যালয়ের সামনে পাহারা রাখছি না। তবে আগের মতো কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ।এর আগে সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অগ্নিদগ্ধদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ তালা দেয়নি, বিএনপি নেতারাই তালা দিয়েছে। নেতাকর্মী এখন সেখানে আসে না। কেন আসে না– সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সেখানে সব সময়ই থাকে। মাসের ৩০ দিনই সেখানে পুলিশ পাহারায় থাকে; একইভাবে এখনও সেখানে পুলিশ আছে।ডিএমপি কমিশনার বলেন, অবরোধের নামে বহু যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। যাত্রী, চালক ও হেলপারদের নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। নাঈম নামের একজন হেলপারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আহত অনেকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। নৃশংসতা ও রাজনীতি সম্পূর্ণ বিরোধী। তারপরও এগুলো আমরা দেখছি। আহত বাস শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আহতদের পরিবার, বাসমালিক, মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই নৃশংসতায় যারা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। যারা এসব ঘটিয়েছে, তারা যেখানেই থাকুক– কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।