এখনও সংখ্যালঘুরা চরম বৈষম্যের শিকার- হিন্দু মহাজোটের অভিযোগ

0
অনলাইন ডেস্কঃ দেশের সংখ্যালঘুরা এখনও চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ হিন্দু শুন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কোনো সংসদেই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি পাঠাতে পারেনি। প্রতিটি সংসদে বিএনপি থেকে মাত্র একজন, জাতীয় পার্টি থেকে ২/৩ জন এবং আওয়ামী লীগ থেকে ৬ থেকে ১৫ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পেরেছেন।এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারলে আগামীতে পার্লামেন্ট হিন্দু শূন্য থাকতে পারে।

- Advertisement -

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ভীতিময় পরিবেশে বসবাস করছে। প্রতিনিধিত্বহীনতায় হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দুরা ৩৩ শতাংশ থেকে এখন ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। আমরা সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উজ্জ্বল এবং বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত করতে জাতীয় সংসদসহ সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে করতে হবে।বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও দেশে সংখ্যালঘুরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার পাল।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কোনোটিতেই হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। এই সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ২৫২ জন আইন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র একজন হিন্দু। নিয়োগ পাওয়া ৪৭ জন ডিআইজির মধ্যে কোনো হিন্দু নেই। ৩২ জন এসপির মধ্যে একজন হিন্দু। অন্যদিকে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে ৯০ জন হিন্দু কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে।দেশে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।

সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনের সহ-সভাপতি তরুন কুমার ঘোষ বলেন, সারা দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। কিন্তু সেটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সরকার সংবিধান, আইনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও সেখানে হিন্দুদের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় বৃন্দাবনসহ অন্যান্য তীর্থস্থান ভ্রমণের সুযোগ থেকে হিন্দুরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ সকল সমস্যা সমাধানে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সর্বক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি। এই বাস্তবায়নে হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিটি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরে বলা হয়, দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ১২ শতাংশ। সেই হিসাবে ৩৫০টি সংসদীয় আসনের ৪২টি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে ৩৮টি হিন্দুদের জন্য, বৌদ্ধদের জন্য তিনটি ও খ্রিস্টানদের জন্য একটি আসন থাকতে হবে। সারা দেশের প্রাপ্ত ভোট অনুসারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলো সদস্য মনোনীত করবে। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ, আদিবাসী ও খ্রিস্টান সংসদ সদস্যরা সমমর্যাদা সম্পন্ন হবেন। ভোট দেবেন স্ব স্ব সম্প্রদায়ের ভোটাররা।

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.