বিশেষ প্রতিবেদকঃ টানা দরপতনের কবলে পড়েছে শেয়ারবাজার। প্রতিদিন কমছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর। দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজারের পতনও বাড়ছে। পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্যসূচকের যেমন বড় পতন হয়েছে, তেমনি বাজার মূলধন কমেছে সমানতালে। গত সপ্তাহ শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কমেছে। প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২০০ পয়েন্ট। বাজারটিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার চেয়ে প্রায় ছয় গুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে গড় লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। এর পরে আবারও দরপতনের মুখে পড়ে শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মাত্র ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ৩৪৯টির। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকে। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৫৭টির স্থান হয়েছে বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩১টির। আর ৮টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। দাম বাড়ার চেয়ে কমার তালিকায় ৫ দশমিক ৮১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১৭৬ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের ছয় সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৮৮ পয়েন্ট। শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া গত আট সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৪৬০ পয়েন্ট। সবকটি প্রধান মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৫৩ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের মূল শক্তি আস্থা। কিন্তু গত দুই মাসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু নীতিকথা দিয়ে শেয়ারবাজার চলবে না। আগামী দিনের বাজার কোথায় যাবে, কি করা হবে তার একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানাতে হবে বিনিয়োগকারীদের। শুধু কয়েকজনকে শাস্তি দিলেই বাজার স্থিতিশীল হবে না। এসব কারণে বাজারে সূচক ধরে রাখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
Next Post