সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ বৈরুতে আঘাত করা ১৩টি বিমান হামলার মধ্যে একটি ছিল এটি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। একজন ইসরায়েলি মুখপাত্র এর আগে দক্ষিণ বৈরুতের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে সরে যেতে সতর্ক করেছিলেন, তবে রফিক হারিরি হাসপাতাল উল্লেখিত স্থানগুলোর মধ্যে ছিল না।
সর্বশেষ লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা এনএনএর খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব বেক্কা উপত্যকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংক আল কার্দ আল হাসান অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন শাখায় হামলা হয়েছে। বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেও ব্যাংকটির একটি শাখায় হামলা হয়েছে।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণস্থল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লেবাননজুড়ে ওই ব্যাংকটির ৩০টির বেশি শাখা আছে। এর মধ্যে ১৫টি আছে বৈরুতের জনবহুল এলাকায়। ইসরায়েল ওই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহকে অর্থায়নের অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলছে, হিজবুল্লাহর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ বলছে, গত রবিবারও ইসরায়েলে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা।
ইসরায়েলের মুখপাত্র আরো বলেছেন, ‘বেসামরিক প্রতিষ্ঠান, অ্যাসোসিয়েশন ও এনজিওগুলো ব্যবহার করে ইরান কিভাবে হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থের জোগান দেয়, আসন্ন কয়েক দিনে সেটি আমরা প্রকাশ করব।’
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় আইডিএফ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। গত রবিবার লেবাননে থাকা জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনীর একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারওয়াহিনে ইসরায়েল সীমান্তে জাতিসংঘ অবস্থানের নিরাপত্তাবেড়া ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আইডিএফের বিরুদ্ধে।
ইউনাইটেড নেশনস ইনটেরিম ফোর্স ইন লেবানন বা ইউনিফিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাতিসংঘ অবস্থান অমান্য করা ও জাতিসংঘ সম্পদ ধ্বংসের মতো অপরাধ আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের নিদারুণ লঙ্ঘন।’
গাজা
লেবাননের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভোরে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় অন্তত ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি ছিটমহলের উত্তরাঞ্চলে মানবিক মিশনকে ওষুধ ও খাদ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্স-কে বলেছেন, ‘যারা পালানোর চেষ্টা করছে তাদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের লাশ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে।’
ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের চিকিৎসকরা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা একটি স্কুলে হামলা চালায়, এতে মানুষ সেখানে আটকা পড়ে। হামলার ফলে জ্বলে ওঠা আগুন হাসপাতালের জেনারেটর পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আদেশ মেনে নেননি। এলাকার তিনটি হাসপাতাল খালি করতে বা রোগীদের অযৌক্তিকভাবে ফেলে রেখে যেতে বলেছিল তারা। গতকাল সোমবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া বলেছেন, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে কমপক্ষে দুইজন গুরুতর আহত রোগী চিকিৎসা সরবরাহের অভাবে মারা গেছেন। দুই সপ্তাহ আগে অঞ্চলটির উত্তরে নতুন করে আগ্রাসন শুরু করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
আবু সাফিয়া মিডিয়া আউটলেটে একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘হাসপাতালের রক্ত সম্পূর্ণ ফুরিয়ে গেছে… আমরা রোগীদের রক্ত দিতে না পারায় অগ্রাধিকারমূলক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করছি। এটাই বাস্তবতা।’ কামাল আদওয়ান নামের দ্বিতীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা রাতে হাসপাতালের কাছে প্রচণ্ড ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছেন।
সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্স