LastNews24
Online News Paper In Bangladesh

ইলন মাস্ক : প্রচলিত ধারণাকে যিনি বুড়ো আঙুল দেখান

0

তথ্যও প্রযুক্তি ডেস্ক প্রতিদিনই নিত্যনতুন চমক নিয়ে হাজির হন ইলন মাস্ক। কি টেসলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে কি টুইটারের নতুন মালিক হওয়ার সংবাদে! সংবাদমাধ্যমে ইলন যেন পুরনো হওয়ার নন। সেই ইলন মাস্ককে খোঁজা চেষ্টা করেছেন আনিকা জীনাতইউটিউবে ইলন মাস্কের যে ভিডিওগুলো আছে সেগুলোর নিচে কমেন্ট সেকশনে গেলে সবচেয়ে বেশি যে কথাটি দেখা যায় তা হলো ‘ডাউন টু আর্থ’। যার বানানো রকেট মহাকাশের দিকে ছুটে যায় তিনি মাটির কাছাকাছি মানুষ।অন্তত ইলন ভক্তরা তা-ই দাবি করেন। কারণ নিজের কোনো একটি কম্পানির কাজ নিয়ে যখন তিনি কথা বলেন তখন তাঁর চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায়। কথা বোঝানোর জন্য সবর্দা সহজ শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করেন, যাতে প্রশ্নকারী বিব্রত না হন।তাঁর সঙ্গে বেশ জমজমাট একটা আড্ডা দিয়েছিলেন খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। সেটা ৯ বছর আগের কথা। পুরোটা সময় শুধু কাজ নিয়ে কথা বলেছেন ইলন মাস্ক। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই জানিয়ে দেন, টেসলা গাড়ির কারখানায় ‘ছোট্ট’ একটা ঝামেলা ছিল। তাই আসতে দেরি হয়েছে। তিন ডলারের কেবল সময়মতো কাস্টমস থেকে ছাড়া পায়নি বলে উৎপাদন থমকে যায়। ফলে টেসলার কারখানা থেকে সময়মতো বের হতে পারেননি ইলন। এ রকম ছোটখাটো ঝামেলা নিত্যদিনের। রাতের খাবার খাওয়া হয়নি বলে সাক্ষাৎকার দিতে দিতেই খাবার মুখে তুলে নেন। মনে হতে পারে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির জন্য এটা কোনো বিষয় না। স্বপ্ন পূরণের মূল্য দেওয়াই তো স্বাভাবিক। তবে এমনটা ভাবলে জেনে রাখুন, তিনি আর আট-দশজন কোটিপতির মতো নন।

১২ বছর বয়সেই কামিয়েছিলেন ৫০০ ডলার
ছোটবেলা থেকেই তাঁর মাথায় আইডিয়া কিলবিল করত। ভিডিও গেম বানিয়ে ১২ বছর বয়সেই পেয়েছিলেন ৫০০ ডলার। অন্যদের চেয়ে যে তিনি আলাদা তা বুঝতে বেশি সময় লাগল না। অন্তর্মুখী স্বভাবের মাস্ক স্কুলে খাপ খাওয়াতে না পেরে বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে দিনে ১০ ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন। স্কুলে অন্যদের সঙ্গে মিশতে না পারার অপরাধে তাঁর মাথায় ছোড়া হয়েছিল কোকের ক্যান। মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালও যেতে হয়েছিল।

হতে চাননি ঝাঁকের কোনো এক মাছ
১৭ বছর বয়সে তিক্ত শৈশব দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেলে পাড়ি জমান কানাডায়। সেখান থেকে পড়তে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। তবে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে বুঝলেন ডিগ্রি তাঁর কোনো কাজেই আসবে না, নিজে নিজেই কিছু করতে চান।
ঝাঁকের মাছ নন বলেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিইচডি করার বদলে ‘ইন্টারনেট বুমিং’ জমানার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে নামের আগে ‘ড.’ বসানোর লোভ ত্যাগ করে শুরু করলেন নিজের স্টার্টআপ।
তাঁর কাছে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার গুরুত্বই বেশি। মাস্কের মতে, ডাটা ডাউনলোড করে অ্যালগোরিদমের কাজ করার নামই শিক্ষাব্যবস্থা। মুখস্থ বিদ্যায় ভরসা নেই বলে নিজের ছয় ছেলের জন্য স্পেসএক্সের ভেতরেই তৈরি করেন অ্যাডঅ্যাস্ট্রা একাডেমি। সেখানে হাতে-কলমে কাজ শেখে তাঁর ছেলেরা। তাদের পড়া শেষ বলে স্কুলও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে অ্যাডঅ্যাস্ট্রা থেকে জন্ম নিয়েছে অনলাইন স্কুল ‘অ্যাস্ট্রা নোভা’। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী যে কেউ এতে ক্লাস করতে পারে। সপ্তাহে এক দিন সাড়ে সাত হাজার ডলারের বিনিময়ে শিখতে পারে ভিন্ন কিছু।

পেপাল বিক্রি করে বানালেন রকেট
ইলন মাস্ক নিজেও শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করেননি। পেলসিনভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও পদার্থে স্নাতক করেছিলেন। রকেট সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না। বই পড়ে এবং রকেট বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে রকেটের খুঁটিনাটি জানতে শুরু করেন। পেপাল বিক্রির ১৭৫.৮ মিলিয়ন ডলারের অর্ধেক খরচ করেন রকেট নির্মাতা কম্পানি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠায়।
অর্ধেক টাকা রকেট তৈরিতে খরচ করে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই মানুষের মনে প্রশ্নটা এলেই পারে―সব বাদ দিয়ে কেনো রকেট বানাতে গেলেন। রকেটের বদলে আবাসন ব্যবসায় টাকা খাটালেই বরং তাঁর জীবন হতো সহজ। রকেট তৈরির পেছনের কারণটা বেশ অবাক করার মতো। এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, ২০০১ সালে নাসার ওয়েবসাইট দেখে জানতে পারেন চাঁদে মানুষ পাঠাচ্ছে না তারা। অদূর ভবিষ্যতেও মহাকাশে মানুষ পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই নাসার। মঙ্গল তো বহু দূরের ব্যাপার। ইলনের মনে হলো, নাসা যখন কাউকে পাঠাচ্ছে না তিনিই রকেট বানিয়ে মানুষ পাঠাবেন। ১৯৬৯ সালে চাঁদে পা রাখার পর স্বাভাবিকভাবেই ২০১৩ সালে মানুষ মঙ্গলে যাওয়ার কথা ভাববে। এমনটা ধরে নিয়েই ২০০৬ সালে বানাতে শুরু করলেন স্পেসএক্সের প্রথম রকেট ‘ফ্যালকন ১’। খরচ হলো ৬০ লাখ ডলার। সে সময় একই ধরনের অন্যান্য রকেটের দাম ছিল আড়াই কোটি ডলার। এখন তিনি স্পেসএক্সের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। এবং তিনি যে রকেট বানানোর জন্য যোগ্য ব্যক্তি তার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন। রকেট শুধু তৈরিই করেননি, কিভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট বানিয়ে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা যায় সে পথও দেখিয়েছেন।

টেসলার জন্য সোফায় ঘুমিয়েছেন টানা তিন বছর
স্পেসএক্সের পর বাকি সময়টা তিনি টেসলাকে দিয়েছেন। ২০১৭ সালে টেসলা মডেল ৩ গাড়ির উৎপাদন জটিলতায় প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছিল। সে সময় নেতৃত্ব দিয়ে নিজেই টেসলাকে বাঁচিয়েছেন দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে। টেসলার প্রধান হিসেবে কর্মীদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন কম্পানির দুঃসময়ে তাঁর অবস্থা অন্য সবার চেয়ে বেশি শোচনীয়। তাই বাড়িতে বা হোটেলে না গিয়ে অফিসের সোফায় ঘুমিয়েছেন টানা তিন বছর (২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত)। নিজের ব্যক্তিগত জীবন ভুলে সপ্তাহে গড়ে তিনি কাজ করেছেন ১২০ ঘণ্টা।
আজ টেসলা বিশ্বের অন্যতম সফল কম্পানি বলেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হয়েছেন তিনি। ৫০ বছর বয়সেই মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের চেয়ে দ্বিগুণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
শুধু প্রযুক্তি নয়, ব্যবসায় কিভাবে উন্নতি করতে হয় সেটাও তাঁর খুব ভালো করে জানা আছে। টেসলা গাড়ি বিক্রি করেই তিনি গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেন না। কোনো টেসলা গাড়ির মালিক টুইটারে কোনো ত্রুটির বিষয়ে লিখলে মাস্কের কাছে সেটাকে বেশ গুরুত্ব পায়। টেসলার প্রকৌশলীদের ত্রুটি সারানোর নির্দেশ দেন। এতে গ্রাহক দাম নিয়ে টেসলা গাড়ি কিনে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। টেসলা গাড়ি থেকে কার্বন নিঃসরণ হয় না।   পরিবেশবান্ধব এই গাড়ি জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতেও ভূমিকা রাখছে।

মহাশূন্যে পাঠাতে চান ৪২ হাজার স্যাটেলাইট
টাকা জমিয়ে নিশ্চিন্ত জীবন বেছে নেননি। হাঙর ভরা সাগরে ঝাঁপ দিয়েছেন বারবার। সমুদ্রের নিচে কী আছে তা না দেখে ফেরত আসেননি। এ কারণে তাঁর রকেটে করেই এখন নাসার নভোচারীরা মহাকাশে যাচ্ছেন। একই রকেটে করে মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে স্টারলিংক স্যাটেলাইট। মোট ৪২ হাজার স্যাটেলাইট পাঠানোর পর পুরো পৃথিবীকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের আওতায় আনা যাবে। কম খরচে আফ্রিকার বহু দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে। মঙ্গল গ্রহে মানুষও পাঠানো হবে ফ্যালকন রকেটে করে।

আছে নিউরালিংকও
মানুষের কল্যাণে আরো একটি উদ্যোগ চালু করেছেন ইলন মাস্ক। তাঁর নিউরালিংক কম্পানি এমন একটি চিপ তৈরি করছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ ঘটাবে। যা কিছুই চিন্তা করা হবে তা কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এর ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিও নিজের মনের কথা জানাতে পারবেন।

ভবিষ্যত নিয়ে হতে চান না হতাশ
রকেট ও  গাড়ি ছাড়াও, টানেল, স্যাটেলাইট, এআই চিপ, সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক। তাঁর মতে, মানুষ সব সময় ভাবে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু হবে। তবে এই ভালো কিছু কখনো এমনি এমনি হয় না। মিসরের কারিগররা একসময় পিরামিড বানিয়েছিল। কিভাবে বানানো হয়েছিল সেই কৌশল কেউ মনে রাখেনি। তাই আর কোনো পিরামিড তৈরি করা যায়নি; সমানে এগনো যায়নি। প্রযুক্তিও সে রকমই একটি বিষয়। কেউ কিছু উদ্ভাবন না করলে মানব সমাজের অগ্রগতি থেমে যাবে। ইলন মাস্ক বলেন, নিজেকে ত্রাতা মনে করেন বলে এত কিছু উদ্ভাবন করেননি; তিনি শুধু ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হতে চান না।

About Author

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More