দিনাজপুর প্রতিনিধি/- ৫ দিন ধরে চলমান আন্দোলনে আন্দলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ৬ দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তেল গ্যাস জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।
আজ সেই ২৬ আগস্ট, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের এইদিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি না করার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তৎকালীন বিডিআর ও পুলিশের গুলিতে আমিন, সালেকীন ও তরিকুল নামের তিন যুবক নিহত হন। আহত হন দু’শতাধিক নারী-পুরুষ।
এই ঘটনায় যারা আহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে সাহাবাজপুরের গুলিবিদ্ধ প্রদীপ সরকার যন্ত্রণা নিয়েই ১৯ মাসে আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুজাপুরের গুলিবিদ্ধ বাবলু রায়ের মতো অনেকেই এখনও পঙ্গুত্ব বরণ করে অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
সেদিনের ছয়দফা চুক্তির মধ্যে রয়েছে এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ও দেশ থেকে বহিষ্কার, উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি ফুলবাড়ীসহ দেশের কোথাও না করা, পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, গুলি বর্ষণসহ হতাহতের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, শহীদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেফতারসহ শাস্তি প্রদান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা।
দাবিগুলোর মধ্যে নিহত ও আহতরা কিছু ক্ষতিপুরণ পাওয়া ছাড়া আর কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। উপরোন্ত নতুন করে ২টি মামলার আসামি হয়েছেন আন্দোলনকারী নেতারা। যে স্মৃতিসৌধটি রয়েছে সেটি সরকারি খরচে হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা নিজেদের অর্থে ছোট যমুনা নদীর ধারে করেছেন। সেটিও যেকোনো সময় নদীর স্রোতে ভেসে যেতে পারে।২৬ আগস্ট দিনটিকে তেল গ্যাস জাতীয় কমিটি ‘সম্পদ রক্ষা দিবস’ এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’ হিসেবে পালন করেন। দিবসটি উপলক্ষে নেয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে স্মারণসভা এবং মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও পেগোডায় দোয়া এবং বিশেষ প্রার্থনা।
অপরদিকে আন্দোলনকারী সংগঠনের দু’জন নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দররক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু খনি আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক পরপর দু’বার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে পরষ্পর নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এতে করে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তা অনেকটা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ কারণে নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও কমতে শুরু করেছে।