অস্থিরতা কমাতে চাই ১০ লাখ টন মজুত

0
বিশেষ প্রতিবেদকঃ কৃত্রিমভাবে মূল্য বৃদ্ধি এবং আলুর বাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে সরকারিভাবে প্রতিবছর ১০ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। হিমাগার মালিকদের দাবি সরকার আমাদের সঙ্গে একমত হলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমবে এবং ন্যায্যমূল্যে আলু কিনতে পারবেন ভোক্তা।এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বাণিজ্য উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। এক বছর আগেও বাজারে আলুর কেজি ছিল ৪৫ টাকার মধ্যে। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে আলুর কেজি পৌঁছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। মহামারি করোনার সময় ২০২০ সালের এই সময় দেশে আলুর কেজি ছিল ৫০ টাকা। সম্প্রতি আলুর দাম স্মরণকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় পৌঁছে। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। কোনো কারণ ছাড়াই তারা আলুর দাম বাড়াচ্ছে। হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে যে দামে আলু কিনে, বিক্রি করে তার চেয়ে অনেক বেশি দরে। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সম্প্রতি বাজারে আলুর দাম সীমা অতিক্রম অস্থিরতাকরেছে, ফলে জনগণের উচ্চ দামে এই সবজি কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার জনগণের জন্য সব ধরনের খাদ্য এবং ভোগ্যপণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে প্রদান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং এই লক্ষ্যে ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।হিমাগার মালিকদের সংগঠন মনে করে, সরকার ২০২৫ সালের জন্য আসন্ন মৌসুমে যদি ১০ লাখ টন আলু সংগ্রহ করে এবং কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করে, তাহলে দাম ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখা সম্ভব। অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সাধারণত প্রতি বছর আগস্ট থেকে আলুর দাম বৃদ্ধি পায় এবং যুক্তিসংগত মূল্যস্তর অতিক্রম করে। ওই সময়ে যদি প্রতি মাসে (চার মাস) গড়ে আড়াই লাখ টন আলু বাজারে সরবরাহ করা হয়, তবে দাম ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।এ ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব হবে। এ কারণে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) মাধ্যমে পুরো মৌসুমে ১০ লাখ টন আলু সংগ্রহ ও সারা দেশের কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সংরক্ষণ এবং পরবর্তীতে ন্যায্য দামে বাজারে সরবরাহ করা উচিত। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের আলু ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেছেন, কোল্ড স্টোরেজে আলুর দাম ৫৬-৫৮  থেকে বেড়ে ৬৮-৭০ টাকায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, তারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আলু ৭৮-৮০ টাকায় বিক্রি করছেন এবং কোল্ড স্টোরেজ গেটের দাম গত তিন সপ্তাহে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে।তিনি আরও বলেন, কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা এবং বড় ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রিতে বেশি মুনাফা করছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি উৎপাদন মৌসুমে আলু বীজের চাহিদা বেশি। বেসরকারি খাতের বিপণনে বীজের দাম ৮৫ টাকার ওপরে। দেশে বীজের চাহিদা সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টন, তবে বিএডিসি প্রায় ৩৭ হাজার টন বিতরণ করেছে। অনেক কৃষক আগে আলু বিক্রি করেছেন যা বীজ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল, কারণ তারা ভালো দাম পেয়েছেন, যা কিছু সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাস্তব উৎপাদন এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দ্বারা প্রদত্ত অতিরঞ্জিত তথ্যের মধ্যে একটি বড় ফারাক রয়েছে।বিবিএস অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবছরে আলু উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন, তবে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন দাবি ৯০ লাখ টন উৎপাদনের। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে  বেড়ে গেলে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলু সরবরাহ করা গেলে ভালো হবে, কারণ দাম বাড়ে সিন্ডিকেটের কারণে।তিনি বলেন, সরকার যদি আলুর মৌসুমে ১০ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করে তবে এটি করা সম্ভব। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকট এড়াতে আলু উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

- Advertisement -

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.