অনুমোদনের আগেই গ্যাসকূপ খননের দরপত্র!

0
বাণিজ্য প্রতিবেদকঃ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) বা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের আগেই পেট্রোবাংলার অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠান সাতটি কূপ খননের দরপত্র আহ্বান করেছে। মূলত ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে সময় বাঁচাতে দ্রুত গ্যাস অনুসন্ধানে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তবে ডিপিপি চূড়ান্ত না করেই এগিয়ে যাওয়া এসব প্রকল্পে ডিজাইন, পরিকল্পনা এবং বিশ্লেষণের অভাবে বড় ধরনের অর্থ ও সম্পদ ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তারা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে যথাযথ পরিকল্পনা এবং পূর্ব প্রস্তুতির অভাব প্রকল্পগুলোর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও দক্ষতা যাতে নিশ্চিত হয় সেই পরামর্শও দিয়েছেন। ডিপিপি অনুমোদন ছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সাতটি গভীর কূপ খননের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) তিনটি গভীর কূপ খনন প্রকল্প রয়েছে। বাকি চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এবং বিজিএফসিএল।

প্রকাশিত দরপত্রের প্রি-বিড মিটিংয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি অসংগতি এবং নকশাগত ত্রুটি তুলে ধরেছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রিলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে কেসিংয়ের আকার ও গভীরতা নির্বাচন, কেসিং গ্রেড নির্বাচন, ড্রিলিং স্ট্রিং ডিজাইন, ড্রিল মাড ডিজাইন, ড্রিল বিট ডিজাইন, হাইড্রোলিক্স ডিজাইনসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। তবেই ড্রিলিং এ শতভাগ সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে শেভরন কোম্পানি ১৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিবিয়ানায় দুটি কূপ খনন করেছে, যেগুলো থেকে কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অর্থ বাপেক্সকে দিলে অন্তত ১০টি কূপ খনন করা যেত, অথবা এ অর্থ দিয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলএনজি আমদানি সম্ভব হতো।

এছাড়া বাপেক্সের বেগমগঞ্জ-৪ এবং সিনোপ্যাকের সিলেট-১০ প্রকল্পে নির্ধারিত গভীরতায় পৌঁছার আগেই পাইপ স্টাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পেট্রোবাংলার অধীনে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা থাকলেও এই প্রকল্পগুলো তাড়াহুড়ো করে লোকেশন নির্ধারণ এবং সঠিক নকশা ও পরিকল্পনা ছাড়া এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের প্রকল্প শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, দেশের জ্বালানি রিজার্ভেরও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তাই সরকারের উচিত ডিপিপি প্রণয়ন এবং শতভাগ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই কূপ খনন কার্যক্রম শুরু করা, যাতে সরকারের অর্থের অপচয় এবং দেশের সম্পদের ক্ষতি রোধ করা যায়।

সরকারি অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সাধারণত পরিকল্পনা কমিশন থেকে ডিপিপি অনুমোদন নিতে হয়। ওই ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয়, মেয়াদ ও অন্যান্য বিস্তারিত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে।

বিজিএফসিএল’র উপমহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ শামিমুজ্জামান আখন বলেন, চারটি কূপ খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে একটির ডিপিপি অনুমোদন পাওয়া গেছে। বাকি তিনটির অনুমোদনের জন্য ডিপিপি একনেকে আছে। শিগগিরই তিনটি কূপ খননের আশা করছি। তিনি বলেন, দেশে এখন গ্যাসের সংকট চলছে। সংকট কাটাতে দ্রুত কূপ খনন দরকার। সেজন্যই ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যাতে সময় কম লাগে। ডিপিপি অনুমোদনের পরই খননকাজের চুক্তি সই হবে। ওই চারটি কূপে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ডিপিপি পাস হওয়ার পরই দরপত্র আহ্বান করা উচিত। না হলে বিভিন্ন জটিলতা তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ডিপিপি অনুমোদন এবং দরপত্র প্রক্রিয়া একই সঙ্গে চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কিছু সুবিধাও আছে। যেমন ডিপিপি অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হলে আগ্রহী ঠিকাদাররা প্রকল্পের বাজেট এবং অনেক সময় গোপনীয় অনেক বিষয় জেনে যায় তখন নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে দরপত্র আহ্বান করা হলেও ডিপিপি অনুমোদন ছাড়া ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনার জায়গা থেকেই তারা চারটি কূপ খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছেন। একই সঙ্গে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরিও করে জমা দিয়েছেন। প্রকল্পের সময় কমিয়ে আনতে সমান্তরালে দুটি কাজ চলছে। শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই পুরো কাজ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূপ খনন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে কেসিংয়ের আকার ও গভীরতা নির্বাচন, কেসিং গ্রেড নির্বাচন, ড্রিলিং স্ট্রিং ডিজাইন, ড্রিল মাড ডিজাইন, ড্রিল বিট ডিজাইন, হাইড্রোলিক্স ডিজাইনসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। তবেই ড্রিলিং এ শতভাগ সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডও (বাপেক্স) চারটি কূপ খননের প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব কূপ খননের দরপত্র বিজ্ঞপ্তিও তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব বলেন, ওই দরপত্র আহ্বানের সময় পেছাবে। কারণ চারটি কূপ খনন প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের পরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।

বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪০০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে দেশীয় কূপ থেকে উৎপাদিত গ্যাস এবং আমদানি করা উচ্চমূল্যেও এলএনজিসহ গড়ে প্রায় ২৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গ্যাসের সংকট কাটাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার অধীনে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।

- Advertisement -

- Advertisement -

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.